বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সিআরবি শিরীষতলার মেলা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল মেলার আয়োজক কমিটি প্রধান এম মাজেদ সর্দ্দারকে ডেকে মেলার অনুমতি বাতিলের কথা জানানো হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলার অনুমতি বাতিলের পর মেলার মালামাল মাঠ থেকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকে সিআরবি শিরীষতলার মাঠে বসানো স্টলগুলোর মালামালগুলো নিয়ে যেতে থাকেন। উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘এবার মেলার দখলে সিআরবি, শিরীষতলায় টিনের ঘেরা দিয়ে মাঠজুড়ে স্টল, পরিবেশ–প্রতিবেশের ক্ষতির শঙ্কা, সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশবিদদের ক্ষোভ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলার আয়োজক এ মাজেদ সর্দ্দারকে অনুমতি বাতিলের কথা জানানো হয়।
গতকাল তাকে চূড়ান্তভাবে বলে দেয়ার পর থেকে মেলায় আগত স্টল মালিকদের তাদের পণ্য নিয়ে চলে যেতে বলেন। দুপুরের পর সারি সারি পিকআপে করে দোকানিরা তাদের পণ্য নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়।
বিকালের মধ্যে মেলার মাঠ থেকে প্রায় স্টল মালিক তাদের পণ্য নিয়ে চলে যান। গতকাল বিকালে সিআরবি মাঠে গিয়ে বেশ কয়েকজন স্টল মালিকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, মেলা যারা আয়োজন করেছেন–তারা বলেছেন আমাদেরকে চলে যেতে। প্রশাসন নাকি মেলা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই চলে যাচ্ছি। স্টল মালকদের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক, শাহীন, সোহেল বলেন, আমাদেরকে ৪৫দিন মেলা চলবে বলে এখানে এনেছেন। আমরা এসেছি দেশের অনেক দূর–দূরন্ত থেকে। অনেকেই আসছেন নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ি, ডেমরা, নবাবপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পিকআপে করে মালামালগুলো আসতে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছে। এখন নিয়ে যাওয়ার সময় আবার এতো টাকা খরচ হবে। যারা মেলা আয়োজন করেছেন তারা তো আমাদের পণ্যগুলো আনা নেওয়ার খবর দিবে না। আমরা একেক স্টলে ৩–৪ জন করে এসেছি। আয়োজক কমিটির এমন একটি জায়গায় মেলার আয়োজন করবে সেটা আমরা জানতাম না। প্রথমে প্রতিটি স্টল থেকে আয়োজকরা ‘টোকেন মানি’ নিয়ে নিয়েছে বলে জানায় বেশ কয়েকজন স্টল মালিক।
চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত নগরীর সিআরবির মতো সংরক্ষিত এলাকায় মাসব্যাপী জামদানি ও দেশীয় পণ্য মেলার নামে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশবিদরা। সিআররি শিরীষতলার মাঠে প্রতিদিন বিকালে স্কুল–কলেজের ছেলে ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলা খেলে। আর পুরো সিআরবি জুড়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে নানান শ্রেণি পেশার মানুষ কেউ হাঁটেন, কেউ আড্ডা দেন, কেউ প্রকৃতির অপার সৌন্দার্য উপভোগ করতে যান। অনেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে বন্ধুদের নিয়ে ভাসমান টংয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা–ফুচকা খেতে যান। এভাবে চট্টগ্রামের মানুষের স্বস্তির জায়গায় পরিণত হয়।
এছাড়াও সিআরবির শত বছরের এই সবুজ প্রকৃতির মাঝে চট্টগ্রামবাসী পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে থাকেন। এছাড়াও বসন্ত উৎসবসহ বেশি কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে কখনো পণ্য মেলা হয়নি। একবার যদি মেলা শুরু হয় তাহলে এরকম বারবার মেলা শুরু হতে থাকবে এবং পরিবেশের বিপর্যয় হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। এরকম একটি জায়গায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মাসব্যাপী মেলার জন্য অনুমতি দেয়ায় রেলওয়ে দুষছেন সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশবিদরা।
মেলার অনুমতির ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আজাদীকে বলেন, দেশীয় জামদানি শাড়ির প্রসারে মেলার জন্য আমাদের কাছে ঢাকা থেকে একজন লোক এসেছিলেন। আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। মেলা এখন হচ্ছে না।
মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান এ মাজেদ সর্দ্দার বলেন, আমরা মেলা আর করছি না। প্রশাসন আমাদের নিষেধ করেছেন। আমরা চলে যাচ্ছি।
আমরা জামদানির প্রচার এবং প্রসারের ব্যাপারে এই মেলার আয়োজন করেছিলাম।