লাইসেন্স নবায়ন না থাকাসহ নানা অনিয়মের দায়ে নগরীর দুটি এবং উপজেলা পর্যায়ের ১৫টিসহ মোট ১৭টি বেসরকারি হাসপাতাল-ল্যাবের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শনের পর এসব বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। মহানগরে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ পরিদর্শন অভিযান পরিচালিত হয়।
মহানগরে সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হাসপাতাল দুটি হচ্ছে চট্টেশ্বরী সড়কের দেশ মেডিকেল সার্ভিসেস এবং পাঁচলাইশের ট্রিটমেন্ট চক্ষু হাসপাতাল। গতকাল নগরীর মোট ৬টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনের পর এ দুটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। পরিদর্শন করা বাকি চার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে নগরীর পাঁচলাইশে মেঘনা ল্যাব, পাঁচলাইশ শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল, ফেয়ার হেলথ, হেলথ হোম প্রাইভেট লিমিটেড।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানায়, দেশ মেডিকেল সার্ভিসেস হাসপাতালটিতে ২০১৫ সালের পর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। অনলাইনে নিবন্ধনও করা হয়নি। ইমার্জেন্সি সার্ভিস নেই। অপারেশন থিয়েটার মানসম্মত নয়। প্রশিক্ষিত ও ডিপ্লোমাধারী কোনো নার্স নেই। ২০ শয্যার হাসপাতালে রোস্টার অনুযায়ী দুজন চিকিৎসকের স্থলে একজনকে পাওয়া যায়। নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের পাশাপাশি হাসপাতালে কোনো মূল্য তালিকাও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ট্রিটমেন্ট চক্ষু হাসপাতালে অনলাইনে নিবন্ধনের নথি, হাসপাতাল পরিচালনার নথি পাওয়া যায়নি। কর্তব্যরত কোনো চিকিৎসক, নার্স কিংবা দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাও হাসপাতালটিতে পাওয়া যায়নি। অপারেশন থিয়েটার মানসম্মত নয়। মূল্যতালিকাও পাওয়া যায়নি। এসবের দায়ে প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
তিনি বলেন, সেবার মান সঠিক ছিল না। আরও বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়া গেছে। এজন্য দুটি হাসপাতাল পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হবে। যে সিদ্ধান্ত আসে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, গতকালের পরিদর্শনে হেলথ হোম প্রাইভেট লিমিটেড এবং ফেয়ার হেলথ হাসপাতালেও একই ধরনের বিভিন্ন অনিয়ম ও ত্রুটি পাওয়া যায়। তাদের এসব ত্রুটি দূরকরণে জন্য ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে বলে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
উপজেলায় বন্ধ ১৫ হাসপাতাল-ল্যাব : মহানগরের বাইরে ১৫ উপজেলায় মোট ৪৩টি বেসরকারি হাসপাতাল-ল্যাব পরিদর্শন করা হয় গতকাল। পরিদর্শন পরবর্তী ১৫টি হাসপাতাল-ডায়গনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, ও আনোয়ারা উপজেলায় ১টি করে, লোহাগাড়ায় ২টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৩টি এবং বাঁশখালীতে ৭টি হাসপাতাল-ল্যাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ পরিদর্শন কার্যক্রম আরো তিনদিন চলবে জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করবো। পরিদর্শনে যেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স হালনাগাদ পাওয়া যাবে না, ভ্যাট-ট্যাঙ বকেয়া পাওয়া যাবে; সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। আমাদের না জানিয়ে বা কোনো ধরণের আবেদন না করেই সেবা কার্যক্রম চালু করেছে, এমন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানও সিলগালা করে দেয়া হবে। তাছাড়া কোন ল্যাব বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধীনে একাধিক কালেকশান সেন্টার থাকলে ওইসব কালেকশান সেন্টারের জন্য আলাদা আলাদা লাইসেন্স দেখাতে হবে। আলাদা ভাবেই ভ্যাট-ট্যাঙ পরিশোধ করতে হবে। আলাদা ভাবে লাইসেন্স ও ভ্যাট-ট্যাঙ পরিশোধের কাগজপত্র দেখাতে না পারলে ওইসব কালেকশান সেন্টারও বন্ধ করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে আগে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল। কিন্তু রোববারের সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডিজি (অতিরিক্ত মহাপরিচালক) মহোদয় বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আমরা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবো।
প্রসঙ্গত, এর আগে দেশজুড়ে গত মে মাসেও অনুমোদনহীন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য বিভাগ। ওইসময় চট্টগ্রামে পরিচালিত অভিযানে বেশ কয়টি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। যদিও কাগজপত্র হালনাগাদ পরবর্তী বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানকেই পুনরায় কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়।