নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় এগিয়েছে চট্টগ্রাম। বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসায় সন্তান না হওয়ার আক্ষেপ ঘুচছে অনেক দম্পতির। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে বন্ধ্যাত্বের বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকরা চাইলেও সেই সেবা নিতে পারেন না। তাই চমেক হাসপাতালই তাদের একমাত্র ভরসা। চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালের গাইনিকোলজি বিভাগের অধীনে বহির্বিভাগে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা নিতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন রোগীরা। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় ডেডিকেটেড অপারেশন থিয়েটারের প্রয়োজন হয়। অপারেশন থিয়েটার না থাকায় ল্যাপারোস্কপি ও হিস্টেরোস্কপি সার্জারি করা যায় না।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইনফার্টিলিটির বহির্বিভাগে গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৯১৭ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ট্রান্সভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফি হয়েছে ৯০০ জনের, স্যালাইন ইনফিউশন সনোগ্রাফি (এসআইএস) হয়েছে ১১২ জনের, আর্টিফিশিয়াল ইনসেমিনেশন (আইইউআই) করা হয়েছে ৩৮ জনের। এরমধ্যে ইতোমধ্যেই ৫১ জন রোগীর গর্ভধারণ নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া হরমোন পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং প্রাথমিক ইনফার্টিলিটি ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন সেবা এখন নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সন্তান ধারণের চেষ্টা করার পর টানা এক বছর সময়কাল যদি কেউ সফল না হন তাহলে তাকে ইনফার্টাইল বা সন্তান ধারণে অক্ষম হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে কত শতাংশ দম্পতি বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দম্পতি এক বছর কোনো ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করেও যখন সন্তান ধারণ করতে পারেন না তখন সেই অবস্থাকে বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। বন্ধ্যাত্ব নারী বা পুরুষ যেকোনো একজনের হতে পারে, আবার উভয়ের হতে পারে। দম্পতিদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রী এবং একই সংখ্যক স্বামীদের শারীরিক সমস্যা থাকে। বাকি ১০ ভাগ ক্ষেত্রে দুজনেরই সমস্যা থাকে। কিন্তু ১০ ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা অজানা থেকে যায়। পুরুষের বন্ধ্যাত্ব রোগ হওয়ার কারণ হচ্ছে– শুক্রাণু যদি কোনোভাবে ফিমেল জেনিটাল ট্র্যাক্টে পৌঁছাতে অক্ষম থাকে তাহলে তা পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এছাড়া শুক্রাণু তৈরি না হওয়া বা কম তৈরি হওয়া। শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক আছে কিন্তু গতিশীলতা ঠিক নেই। শুক্রাণুর আকৃতিগত সমস্যা, শুক্রাণু তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সহবাসে অক্ষমতার কারণে ফিমেল জেনিটাল ট্র্যাক্ট যদি তা না পৌঁছায় সে কারণে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। অন্যদিকে নারীর বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, যা গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওএস), থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, প্রজনন ব্যবস্থার মধ্যে কাঠামোগত অস্বাভাবিকতা, ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ থাকা এবং বাড়তি বয়স অন্যতম সমস্যা। কারণ নারীর বয়স বাড়লে ডিম্বানু হ্রাস পায়।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের গাইনি ও ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাসলিমা বেগম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের আলাদা বিভাগ না থাকার কারণে আমরা রোগী ভর্তি দিতে পারি না। তবে আমরা বহির্বিভাগে অসংখ্য রোগী দেখে থাকি। বর্তমানে আমাদের ইনফার্টিলিটিতে ছয়জন এফসিপিএস ট্রেইনি রয়েছেন। আমাদের বিভাগ চালু করা গেলে রোগীরা আরো বেশি সেবা পেতেন। এছাড়া আমাদের জন্য আধুনিক ল্যাব ও অপারেশন থিয়েটার থাকলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাজারি ও পরীক্ষা নিরীক্ষা এখানেই করা যেতো। বিশেষ করে আমাদের হাসপাতালে আইভিএফ ইউনিট না থাকায় সেবা দিতে পারছি না। এখন এই সেবা নিতে রোগীদের ঢাকায় কিংবা বিদেশে দৌঁড়ঝাপ করতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নতুন বিভাগ চালু করার জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জায়গার সংকট। জায়গার সংকটের কারণে আমরা চাইলেও অনেক বিভাগ চালু করতে পারছি না। এখন তো বিদ্যমান অনেক বিভাগে ডাক্তারদের বসার জায়গারও সমস্যা হচ্ছে। তবে এই সমস্যা কেটে যাবে। বিশেষ করে ক্যান্সার ভবনে অনেকগুলো বিভাগ চলে যাবে। তখন জায়গার সমস্যাও কেটে যাবে।