ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামির আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, আমরা সকলে বন্ধুত্ব চাই, সহযোগিতা চাই। গতকাল বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আলোচনায় উঠে ভারত প্রসঙ্গও। ভারত প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন বলেন, আমরা কেউ বিপদে পড়তে চাই না। আমরা চাই সকলেই সকলের সম্মানিত প্রতিবেশী হিসেবে বাস করুক। এটা শুধু ভারত দিয়ে কথা নয়– সকলের ক্ষেত্রে আমাদের একই কথা। খবর বিডিনিউজের।
বন্ধু হিসেবে আমাদের সাহায্য করুন, কিন্তু মেহেরবানি করে কেউ আমাদেরকে বাধ্য করার চেষ্টা করবেন না। ডিসিশনটা আমাদের জনগণকে নিতে দিন। জনগণ যখন ডিসিশন নেবে তখন সেই ডিসিশন জনকল্যাণমূলক হবে, এটাই হবে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগণের অধিকারের পক্ষে। কিন্তু অন্য জায়গা থেকে যদি আমাদেরকে বাধ্য করার চেষ্টা করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।
জামায়াতের আমির বলেন, আপনার স্বভাব বদলান তাহলে প্রতিবেশী বদলানোর দরকার পড়বে না। প্রতিবেশীকে প্রতিবেশী হিসেবে আপনি রিসিভ করুন, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। আপনি যখন কাউকে সম্মান করবেন, ভালোবাসবেন, আপনার পাওনা হয়ে যাবে তার থেকে ভালোবাসা পাওয়া, সম্মান পাওয়া। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে, অস্থির হওয়ার কিছু নেই। গুলশানের হোটেল লেকশোরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, প্রধান নির্বাহী, বার্তা সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় হয়।
নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, মানব জমিনের নির্বাহী সম্পাদক শামীমুল হক, এটিএন বাংলার পরিচালক (বার্তা) হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, বাংলা ভিশনের প্রধান সম্পাদক আবদুল হাই সিদ্দিক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু এই মত বিনিময়ে ‘মুক্ত গণমাধ্যম’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
রাজাকার শব্দে কষ্ট লাগে : মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরে রাজাকার, আলবদর বাহিনী গড়ে তুলে গণহত্যায় সহযোগিতা করা জামায়াতের আমির বলেন, আমার খুব ব্যথা লাগে যখন একদল বলে ‘পাকিস্তানি রাজাকার’, আরেক দল বলে ‘হিন্দুস্থানি রাজাকার’ –খুব কষ্ট লাগে। আমার দেশের জনগণকে আরেক দেশের দালাল বানাচ্ছি, রাজাকার বানাচ্ছি কেন এটা করছি?
গণহারে মামলা : শতবার চিন্তার পরামর্শ : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক হত্যা মামলায় দল ও শরিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে আসামি করার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, গণহারে একটা হত্যা মামলায় পাঁচশ জনকে আসামি করা হয় এটা কতটুকু যৌক্তিক এটা শতবার চিন্তা করা উচিত। তবে এর আড়ালে কিন্তু মূল ব্যক্তিটির বেঁচে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিহিংসা নয় : জামায়াত দেশ থেকে হিংসা–বিভক্তি রাজনীতির অবসান চায় বলেও মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা হিংসা রাজনীতির কবর চাই এটা আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক, আমরা বিভক্তি রাজনীতির কবর চাই এটাও মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। কোনো বিষয়ে আমরা জাতির বিভক্তি চাই না। সকল ক্ষেত্রে আমরা চাই, জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকুক। ধর্মীয় ভিত্তিতে কাউকে কিছু করতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার যদি এ দেশে শান্তিতে বসবাস করার অধিকার থাকে তাহলে অন্য সকল ধর্মের মানুষের একই অধিকার আছে।
সংখ্যালঘু সমপ্রদায় একটা শব্দ চালু আছে এটার মাধ্যমে সমাজটাকে বিভক্ত করা হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আখন্দও মত বিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন।