বন্দে আলী মিয়া (১৯০৬–১৯৭৯)। বিশিষ্ট কবি, শিশুসাহিত্যিক ও সম্পাদক। কবিতায় ও গদ্যে সরস শিশুপাঠ্য গ্রন্থ রচনা করে তিনি সাহিত্যে সনিষ্ঠ অবদান রেখেছেন। ছবি আঁকায়ও তাঁর নিপুণ শিল্পী মনের পরিচয় মেলে। বন্দে আলী মিয়ার জন্ম ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ই জানুয়ারি পাবনার রাধানগর গ্রামে। পাবনার মজুমদার একাডেমি থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক পাস করে কলকাতা আর্ট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘ইসলাম দর্শন’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। এরপর দীর্ঘ পনেরো বছর শিক্ষকতা করেছেন কলকাতা করপোরেশন স্কুলে। দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে শিশুতোষ পত্রিকা ‘শিশুবার্ষিকী’, ‘কিশোর পরাগ’, ‘জ্ঞানের আলো’ ইত্যাদি পত্রিকা সম্পাদনায় নিবিষ্ট হন। বন্দে আলী মিয়া ঢাকা ও রাজশাহী বেতারেও কাজ করেছেন। বন্দে আলী মিয়া কবিতা, উপন্যাস, নাটক, জীবনী, শিশুসাহিত্য প্রভৃতি মাধ্যমে গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা হলো: কাব্য ময়নামতীর চর (১৯৩০), অনুরাগ (১৯৩২), পদ্মানদীর চর (১৯৫৩), মধুমতীর চর (১৯৫৩), ধরিত্রী (১৯৭৫); উপন্যাস বসন্ত জাগ্রত দ্বারে (১৯৩১), শেষ লগ্ন (১৯৪১), অরণ্য গোধূলি (১৯৪৯), নীড়ভ্রষ্ট (১৯৫৮); গল্পগ্রন্থ তাসের ঘর (১৯৫৪); নাটক মসনদ (১৯৩১); শিশুসাহিত্য চোর জামাই (১৯২৭), মেঘকুমারী (১৯৩২), বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা (১৯৩২), সোনার হরিণ (১৯৩৯), শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা (১৯৫৬), কুঁচবরণ কন্যা (১৯৬১), সাত রাজ্যের গল্প (১৯৭৭) এবং জীবনী কামাল আতাতুর্ক (১৯৩৭), শরৎচন্দ্র, ছোটদের নজরুল (১৯৫৮) ইত্যাদি। তাঁর রচনায় বাংলার মানুষ, সমাজ ও প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটেছে। শিশুমনের জন্য চমৎকার উপযোগী এই গ্রন্থগুলো তাঁকে শিশুসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত করেছে। শিশুসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহীর উত্তরা সাহিত্য মজলিস পদক লাভ করেন। তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার লাভ করেন সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান এর জন্য। তিনি ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে জুন মৃত্যুবরণ করেন।