বন্দর রক্ষা পরিষদের কর্মসূচি স্থগিত স্কপের অবরোধ চলবে

বন্দরের টার্মিনাল বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক আরেক সংগঠনের গণসমাবেশ ও মশাল মিছিল

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকের পর চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালসিসিটি ও নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালএনসিটি বিদেশি অপারেটরের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে আহূত সোমবার সন্ধ্যার অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে বন্দর রক্ষা পরিষদ। অপরদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করলেও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদস্কপ তাদের আগামীকাল বুধবারের আহূত বন্দর অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। গতকাল সোমবার সকালে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় গণসমাবেশ ও মশাল মিছিল করেছে বন্দর রক্ষা ও করিডোর বিরোধী আন্দোলন।

বন্দর সূত্র এবং সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৈঠকে যোগ দেন স্কপের নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রকৌশল, মেম্বার হার্বার অ্যান্ড মেরিন এবং সচিব উপস্থিত ছিলেন। স্কপের পক্ষ থেকে তপন দত্ত, কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার, এস কে খোদা তোতনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা আলোচনায় অংশ নেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ এনসিটি টার্মিনাল ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেওয়ার প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে জানান, বন্দরের চেয়ারম্যান বর্তমানে ছুটিতে থাকায় নভেম্বরে কোনো ধরনের চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হলে বর্তমান সরকারের পক্ষে এমন চুক্তি করার সুযোগও আর থাকবে না। তাই তড়িঘড়ি করে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই।

স্কপ নেতারা এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, লালদিয়ার চর ও পানগাঁও ইজারা দেওয়ার দিন বিডার প্রধান নির্বাহী আশিক চৌধুরী সাত দিনের মধ্যে এনসিটি চুক্তি হবে বলে যে মন্তব্য করেছিলেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ ধরনের কৌশলগত চুক্তি করার নৈতিক কিংবা আইনি অধিকার নেই। তারা আরো জানান, স্কপ গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে এবং এতে এখন দেশের শ্রমিক সমাজ, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ যুক্ত হয়েছে। ফলে স্কপ এখন একতরফাভাবে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে না।

এই প্রেক্ষাপটে স্কপ ঘোষিত আগামীকাল ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পূর্ব ঘোষিত বন্দর অবরোধ কর্মসূচি বহাল থাকবে। তবে অবরোধের তিনটি স্থানে কিছু পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে বলে স্কপের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মাইলের মাথা (সী ম্যান্স হোস্টেল), টোল রোডের টোল প্লাজা গেট এবং বড় পুল এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে।

অপরদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর বন্দর রক্ষা পরিষদ তাদের সোমবার সন্ধ্যার কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে। বন্দর রক্ষা পরিষদের উপদেষ্টা হাসান মারুফ রুমী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছে সিসিটি, এনসিটিতে শ্রমিকদের স্বার্থহানি হয় এমন কিছু হবে না। এ আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমাদের কর্মসূচি দুদিন স্থগিত করেছি।

এর আগে শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বড়পোল, আগ্রাবাদ, সী ম্যান্স হোস্টেল এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছিল সংগঠনটি।

হাসান মারুফ রুমী জানান, গতকাল দুপুর ১২টা থেকে সোয়া একটা পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়। তিনি আদালতে আগামীকাল শুনানির কথা বিবেচনা করে আজকের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, বন্দরের এনসিটি, সিসিটিতে বন্দরের কর্মচারীদের স্বার্থহানি করে এমন কিছু করবেন না। তারপরও আমরা সজাগ থাকব, সচেতন থাকব। আজকের (গতকালের) কর্মসূচি স্থগিত করছি। ২৬ নভেম্বর বুধবার বেলা ১১টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।

বন্দর রক্ষা ও করিডোর বিরোধী আন্দোলন : চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় গণসমাবেশ ও মশাল মিছিল করেছে বন্দর রক্ষা ও করিডোর বিরোধী আন্দোলন। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর আমতল মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, চক্রান্ত বন্ধ না হলে চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের মতো জনতা রাজপথে নেমে আসবে। তারা এনসিটি, লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানান।

বন্দর রক্ষায় স্কপের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে বক্তারা বলেন, দেশের সম্পদ চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ার অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। জনমত উপেক্ষা করে গায়ের জোরে দেশের সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে।

যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা ফজলুল কবির মিন্টু, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি টিকলু কুমার দে, যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সহসভাপতি রুপম কান্তি ধর, সাংস্কৃতিক সংগঠক শিমুল সেন, শ্রমিক নেতা আবু বকর সিদ্দিকী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি মশাল মিছিল বের হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি
পরবর্তী নিবন্ধহাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া