বন্দর নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ বিসর্জন দেয়া হবে না

মতবিনিময় সভায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩১ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখেন, ভরসা রাখেন। আপনাদের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ ও চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এই চট্টগ্রামে কিছু হবে না। যা কিছু হবে চট্টগ্রাম ও দেশের মঙ্গলের জন্য হবে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর সিঙ্গাপুর, কলম্বো, বিশাখাপত্তমসহ আরো বিভিন্ন পোর্টের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চায়। গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দরের মুন্সি ফজলুর রহমান মুন্সি মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে কর্মচারীদের অবদান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক বিদেশী কোম্পানি করতে চায়। তারা আমাদের পার্টনার হতে চায়। আমাদের কাছে এত বিনিয়োগ আমরা কাকে দিবো, আর কাকে দিবো না এই অবস্থা হয়ে গেছে। এক সময় এদের অনেকে আমাদের কাউন্ট করতো না। মাতারবাড়ি নিয়ে আমরা টেন্ডার করেছি। ইতোমধ্যে আমেরিকা থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় কোম্পানি আসতে চায়।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে দুর্বল করার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কিন্তু এখন দেশের একমাত্র বন্দর না। চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট ছিল। মোংলা বন্দরেও কিন্তু ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট হয়ে গেছে। মার্চের ২৬ তারিখে পায়রা বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল তৈরি হয়েছে। কাজেই চট্টগ্রাম বন্দরকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তাই আগামী দিনে যদি চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো সংকট দেখা যায়, তবে লাভবান হবে মোংলা এবং পায়রা বন্দর।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০০৮ সালে কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের ১০০ টা বন্দরের মধ্যে ছিল না। আমরা কভিডের আগে ৫৮ তে চলে এসেছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান ২০৪১ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে স্মার্ট বন্দর করার কথা বলেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, চট্টগ্রাম বন্দর ইতোমধ্যে স্মার্ট হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আরো বেশি উপযোগী করার জন্য আরো অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের এক ইঞ্চি জায়গা খালি রাখছি না। ৩০৪০ বছর কাস্টমসের ইয়ার্ড পড়ে ছিল। গাড়ির মধ্যে গাছ দেখেছি, ঘরের মধ্যে গাছ দেখেছি। চট্টগ্রাম বন্দরের একটা জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, এটা যাতে কাজে লাগানো যায়, এক লাখের উপরে কন্টেনার হ্যান্ডেলিং করা যায়, এটি কেউ দেখেনি। প্রধামন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সেই সমস্যার সমাধান করেছি। সেই কাস্টমস ইয়ার্ডের কাজ চলছে। আমাদের বহির্বিশ্বে অনেক বদনাম। আমরা এলসি করি ইক্যুইপমেন্টের জন্য চলে আসে ইট বালি। আমরা এখান থেকে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করছি, দেখা যায়অন্য পণ্য চলে যাচ্ছে। এতে আমরা বাণিজ্য হারাচ্ছি। আমদানির রপ্তানির জন্য আমরা বন্দরের গেটে স্ক্যানার বসিয়েছি। আমরা আরো দুটো স্ক্যানার বসাচ্ছি।

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে সরকার কাজ করছি। আমাদের পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বে টার্মিনালের কাজ আমাদের শুরু হয়েছে। সেখানে একটি টার্মিনাল আমরা নিজেরা চালাবো। বাকি দুটো টার্মিনাল বিদেশী অপারেটরের মাধ্যমে চালাবো। সেখানে অনেক অর্থের দরকার। বিদেশী অপারেটরের মাধ্যমে চালাতে সরকারের কাছ থেকে আমরা অনুমোদন পেয়েছি। আমাদের বিদেশী বিনিয়োগ দরকার। এখানে ভয়ের কোনো কারণ নেই। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যেসব ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে আসবে এতে বন্দর আরো বেশি সমৃদ্ধ হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের অবস্থান আরো উপরে যাবে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য বিদেশী বিনিয়োগ দরকার। পৃথিবীর সকল দেশ কোনো একটা সময় বিদেশী বিনিয়োগ গ্রহণ করে উন্নত হয়েছে। আমাদের পাবলিক ও প্রাইভেট দুই সেক্টরে বিনিয়োগ দরকার।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নায়েবুল ইসলাম ফটিক বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখেছিবিদেশী অপারেটরের মাধ্যমে নাকি বন্দর পরিচালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা বলতে চাইএই বন্দর আমাদের সম্পদ, এই বন্দর আমাদের মা। এই বন্দর কোনো বিদেশীর কাছে আমরা ইজারা দিতে পারি না।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ আজীম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড বেসরকারি খাতে দেওয়া হচ্ছে এমন খবর গণমাধ্যমে দেখেছি। আমরা এটি চাই না। বর্তমান সরকার আসার পর আলোচনার মাধ্যমে সিবিএ অনেক দাবি আদায় করেছে। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আমাদের চাওয়া পাওয়ার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন।

উপস্থিত ছিলেন বন্দরের বোর্ড সদস্য, বিভাগীয় প্রধান, বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, যুবলীগ নেতা দেবাশীষ পাল দেবু প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপছন্দের তালিকায় লাল সেমাই
পরবর্তী নিবন্ধযেমন কাটল প্রথম দিন