চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কাছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্ধারিত পৌরকর হচ্ছে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে নির্ধারিত এ পৌরকরের বিপরীতে চবক পরিশোধ করে আসছিল মাত্র ৪৫ কোটি টাকা। এতে প্রতি বছর ১১৫ কোটি টাকা করে রাজস্ব হারায় চসিক। দায়িত্ব নেয়ার পর চবক থেকে নির্ধারিত পৌরকরের পুরোটাই আদায়ের উদ্যোগ নেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এর প্রেক্ষিতে চসিককে গতকাল বুধবার বকেয়া পৌরকরের ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করে চবক। যা চসিকের ইতিহাসে চবক থেকে আদায় করা সর্বোচ্চ পৌরকর। চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলছেন, অতীতে মেয়ররা যা পারেন নি তাই করে দেখালেন ডা. শাহাদাত।
জানা গেছে, গতকাল বিকেলে মেয়রের হাতে ১০০ কোটি টাকার চেকটি তুলে দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মুনিরুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হার্বার এন্ড মেরিন) আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ, সচিব মো. ওমর ফারুক এবং চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম কর্পোরেশনকে বন্দর পুরো পৌরকর পরিশোধ করছে। বন্দর থেকে মোটা অংকের পৌরকর পাওয়ায় কর্পোরেশনের কর্মকাণ্ডে গতি বাড়বে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমরা যে বিপুল অংকের ভর্তুকি দিই সেটা আরো বাড়াতে পারব। এতে দুটো খাত আরো সমৃদ্ধ হবে। তাছাড়া নগরের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সেবার পরিধি সম্প্রসারণে আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে।
এদিকে গতকাল বন্দর থেকে চেক গ্রহণের সময় মেয়র বলেন, বর্তমানে নগরবাসীর মৌলিক অধিকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বছরে ৭০ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিচ্ছি আমরা। দায়িত্ব গ্রহণের পরই চসিকের এধরনের সেবাগুলো সচল রাখতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে জোর দিই। বন্দর থেকে পৌরকর আদায়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে তদবির করি। মন্ত্রণালয় এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তা এই ১০০ কোটি টাকা পাওয়ার ফলে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিক সেবা বাড়াতে পারবে চসিক। এ সময় মেয়র ও বন্দর চেয়ারম্যান বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। বন্দর চেয়ারম্যানের অনুরোধে মেয়র বন্দরকেন্দ্রিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চসিকের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমানকে নির্দেশনা দেন। মেয়র জানান, বন্দরকে সচল রাখতে চসিক সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৬০ কোটি টাকার পুরোটা আদায়ের উদ্যোগ নেয়ার পর গত বছরের (২০২৪) ১৫ ডিসেম্বর চবক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় চসিক। এতে চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২০২৫) বন্দরের পরিশোধিত অংক বাদ দিয়ে বাকি ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। পত্রে বলা হয়, চলতি অর্থবছর থেকে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর ধার্য করা হয়।
এরপর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি নৌপরিবহন সচিবকেও চিঠি দেয় চসিক। এতে চসিকের প্রস্তাবিত পৌরকর পরিশোধে চবককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে বলা হয়।
এদিকে চসিকের চিঠি পেয়ে সার্ভে কমিটি গঠন করে চবক। কমিটি চসিকের পাওনা পরিশোধে সুপারিশ করে বলে আজাদীকে জানান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এরপ্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার চসিককে আপাতত ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করার নির্দেশনা দিয়ে চবক চেয়ারম্যানকে দাপ্তরিক পত্র দেয় নৌ–পরিবহন মন্ত্রণালয়।