বন্দরে ৬ জেটিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে কমেছে গতি

পারিশ্রমিক বাড়ানো নিয়ে বার্থ অপারেটর ও ভ্যাসেল অপারেটরদের মধ্যে বিরোধ

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থের ৬টি জেটিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে গো স্লো শুরু হয়েছে। বার্থ অপারেটর এবং ভ্যাসেল অপারেটরদের মধ্যে পারিশ্রমিক বাড়ানোর বিরোধের জের ধরে গতকাল থেকে কাজের গতি কমে গেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার উদ্যোগ নিলেও দুইপক্ষের বিরোধ না মেটায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থের ৬টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়। ছয়টি বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠান এসব জেটিতে বার্থিং নেয়া জাহাজের কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেন। প্রতিটি বার্থে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে দুই ভাগে কাজ হয়ে থাকে। কন্টেনার হুক পয়েন্ট থেকে জাহাজে ওঠানোনামানোর (অনবোট হ্যান্ডলিং) কাজ করা হয় শিপিং এজেন্টদের পক্ষ থেকে। অপরদিকে হুক পয়েন্ট থেকে ইয়ার্ড পর্যন্ত কাজ করা হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে। অনবোট হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি বার্থ অপারেটরের কর্মচারীরা কার্গো শিপমেন্ট, ইমপোর্ট বা এঙপোর্ট পারশিমন, ডিপো থেকে কন্টেনার কল, ভারী পণ্য বোঝাই কন্টেনার আগে জাহাজীকরণসহ বেশ কিছু বাড়তি কাজও করে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়মে অনবোট কন্টেনার হ্যান্ডলিং চলে আসছে। বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে অনবোট হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মাশুল পরিশোধ করে শিপিং এজেন্ট বা ভ্যাসেল অপারেটর। অপরদিকে হুক পয়েন্ট থেকে ইয়ার্ডে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের মাশুল পরিশোধ করে চট্টগ্রাম বন্দর। দুইটি মাশুলই নির্ধারিত।

বার্থ অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময়কালে যে দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেই দরেই তাদেরকে এখনো কাজ করতে হচ্ছে। গত ১৮ বছরে বহুমুখী খরচ বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। কিন্তু অনবোট হ্যান্ডলিংয়ে বার্থ অপারেটরদের মাশুল বাড়েনি। তারা বলেন, অনবোট হ্যান্ডলিংয়ের জন্য যে মাশুলটি দেয়া হয় তাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর ৪০ শতাংশ শ্রমিকের খরচ এবং বাকি ৬০ শতাংশ বার্থ অপারেটরের মালিকের। যা দিয়ে বার্থ অপারেটরের ইকুইপমেন্টসহ বিভিন্ন খরচ মেটানো হয়ে থাকে। শিপিং এজেন্টেরা কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ৪০ শতাংশের উপর প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ালেও বাকি ৬০ শতাংশের উপর বাড়ায়নি। ২০০৭ সালের আগে তারা যেখানে প্রতি কন্টেনার অনবোট হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৮শ থেকে ১ হাজার টাকাও পেতেন সেখানে বর্তমানে পাচ্ছেন সর্বমোট ৫৫৯ টাকা ৫১ পয়সা করে। এতে করে প্রতিটি বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানই আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে বলেও দাবি করেন তারা। বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ বৈঠকও করেন। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও মাশুল বাড়ানো কার্যকর হয়নি বলে জানিয়েছেন বার্থ অপারেটর্স, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর্স এন্ড টার্মিনাল ওনার্স এসোসিয়েশন। এসোসিয়েশনের নেতা ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, আমরা বহুদিন ধরে মাশুল বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসতেছি। কিন্তু আজ নয় কাল করে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কন্টেনার প্রতি কেবলমাত্র ৫ ডলার বাড়ানোর অনুরোধ করেছি। যাতে আমরা কোনরকমে টিকে থাকতে পারি।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। বার্থ অপারেটরদের সাথে আমাদের সরাসরি কোন সম্পকই নেই। তারা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগকৃত। তাদের দাবি দাওয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট করবে। আমরা যেহেতু তাদেরকে মাশুল পরিশোধ করি তাহলে তাদের সাথে আমাদের একটি নেগোসিয়েশন হওয়া উচিত। অথচ সেটা হয়নি। আমরা একটি বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানের কাছেই সেবা নিতে বাধ্য। বিষয়টি অনেকটা জিম্মি হয়ে থাকার মতোই। অথচ যদি আগের মতো আমাদের স্টিভিডোরস আমরা নিয়োগ দিতে পারতাম তাহলে আমাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হতো, দর কষাকষি হতো। স্বচ্চতা থাকতো, থাকতো জবাবদিহীতা। এখন আমাদের কোন কিছুই নেই। নির্দিষ্ট করে দেয়া একটি রেটে টাকা প্রদান করে আমরা সার্ভিস নিচ্ছি। টাকা দিই আমরা, অথচ আমাদের কোন নিয়ন্ত্রনই নেই। আমাদের কাছে তাদের কোন জবাবদিহীতা নেই। আমাদের কার্গো নষ্ট করলেও বলতে পারি না, কন্টেনার ভেঙে ফেললেও বলতে পারি না। বিষয়টি এভাবে না হয়ে যদি আমাদের কাজের অংশটি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে প্রতিযোগিতামূলক দরে আমরা আরো অনেক কমে কাজ করাতে পারতাম। তিনি বলেন, বর্তমানে একটি কন্টেনারের অনবোট হ্যান্ডলিং চার্জ ৫৬০ টাকার মতো। অথচ তারা এখন দাবি করছে ৫ ডলার অর্থাৎ ৬২৫ টাকা বাড়াতে। ৫৬০ টাকার কাজে ৬২৫ ডলার বাড়ানোর দাবিতে তারা গো স্লো শুরু করেছেন বলেও সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান।

চট্টগ্রাম বন্দরে গো স্লো শুরু করায় বন্দরের সার্বিক উৎপাদশীলতায় মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে উল্লেখ করে ভ্যাসেল অপারেটরেরা বলেছেন, এতে বন্দরে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাবে। আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির নেতাকর্মীদের রোষের মুখে কোতোয়ালীর সাবেক ওসি নেজাম
পরবর্তী নিবন্ধস্ত্রীসহ সাবেক এমপি মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা