বন্দরে ১৪ দিনে বেড়েছে পাঁচ হাজার টিইইউএস কন্টেনার

তিনদিনের মধ্যে সরাতে আইসিডিগুলোকে তাগাদা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনারের বিশাল পাহাড় তৈরি হচ্ছে। করোনাকাল এবং লকডাউনে কন্টেনার খালাস কমে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের মধ্যে বন্দর ইয়ার্ডে পাঁচ হাজার টিইইউএস এর বেশি কন্টেনার বেড়েছে। কন্টেনার জট সামাল দেয়ার সতর্কতা হিসেবে বেসরকারি আইসিডিগুলোকে তিন দিনের মধ্যে প্রায় সাড়ে আট হাজার টিইইউএস কন্টেনার সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখার স্থানাভাব দেখা দেয়ায় বেসরকারি আইসিডিমুখী কন্টেনারগুলো সরিয়ে নেয়ার এই নির্দেশ প্রদান করা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, বন্দরে যে পরিমাণ কন্টেনার জাহাজ থেকে নামছে সেই পরিমাণ কন্টেনার ইয়ার্ড থেকে খালাস না হওয়ায় প্রতিদিনই বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত দুই সপ্তাহে বন্দর ইয়ার্ডে পাঁচ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার বেড়েছে। যা বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠে।
বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য বোঝাই এবং খালি মিলে গতকাল ৩৮ হাজার ১৩৯টিইইউএস কন্টেনার জড়ো হয়েছে। গত ১৪ মার্চ ইয়ার্ডে কন্টেনারের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ১৩৬টিইইউএস। শুধু আমদানিকারকেরা খালাস কমিয়েছেন তা নয়, আইসিডিমুখী কন্টেনার সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক গতি নেই। আইসিডিমুখী কন্টেনারগুলো সরিয়ে নিলেও ইয়ার্ড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, কঠোর লকডাউনের সময়ও চট্টগ্রাম বন্দর পুরোদমে সচল রয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে অন্যান্য কার্যক্রম। তবে বন্দর থেকে কন্টেনার খালাসের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। আমদানি বৃদ্ধি এবং সেই তুলনায় কন্টেনার খালাস না হওয়ায় ইয়ার্ডে আটকা পড়া কন্টেনারের সংখ্যা বাড়ছে। আইসিডিগুলো তাদের পণ্য বোঝাই এবং খালি কন্টেনার সরিয়ে নিলে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনারের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে ওঠে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্দর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।
পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সেদিকে সবাই সতর্ক রয়েছে। রমজান মাসে দেশের কোথাও যাতে পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত না হয় সেজন্য বন্দর সার্বক্ষণিক চালু রাখার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে বন্দর সচল রাখাটা নিশ্চিত করা হয়। আগের লকডাউনের সময়কালের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো হয়। এতে সুফলও মিলেছে। বন্দরে কন্টেনারজট দেখা দিলেও পণ্য খালাস ব্যাহত হয়নি। দেশের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক পুরোপুরি সচল রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে গতকাল ৩৮ হাজার ১৩৯ টিইইউএস কন্টেনার রয়েছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে কন্টেনারের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে এর মধ্যে বেসরকারি আইসিডিমুখী কন্টেনার রয়েছে ১১৪৭ টিইইউএস। এছাড়া জেটিতে থাকা বিভিন্ন জাহাজে ডিপোমুখী কন্টেনার রয়েছে ৩৪৮৩ টিইইউএস। এছাড়া ডিপোমুখী খালি কন্টেনার রয়েছে ৩৮০০টিইইউএস।
এসব কন্টেনার সরিয়ে নিলে ইয়ার্ডের কন্টেনার ৩০ হাজার টিইইউএস এর নিচে নেমে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। এই অবস্থায় বেসরকারি আইসিডিগুলোকে আগামী তিন দিনের মধ্যে বিশেষ উদ্যোগে অন্তত ৮ হাজার টিইইউএস কন্টেনার আইসিডিতে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বন্দরের অপারেশনাল কাজে গতিশীলতা আনতে কন্টেনারগুলো জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধিতে জাহাজ হতে কন্টেনার অবতরণের ৪ দিন ফ্রি টাইমের মধ্যে এবং একই বি / এল এর অন্তর্ভুক্ত সকল কন্টেনার একই সাথে যাতে ডিপোতে নেয়া যায় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতে বন্দরের ভেসেল অপারেশন, ইয়ার্ড অপারেশনসহ আমদানি কন্টেনার অপারেশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বিশেষ এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
খালি কন্টেনারের ক্ষেত্রে ৪০ এবং ৪৫ ফুটের কন্টেনারগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত খালাস করার কথাও চিঠিতে বলা হয়েছে।
অবশ্য বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস। সুতরাং এখনো আতংকিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, শুধু সতর্কতা এবং সামনের অনিশ্চয়তা ঠেকাতেই আমাদেরকে এ পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় আরো ৮ জনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকুড়িয়ে পাওয়া শিশুর অভিভাবকত্ব পেলেন পুলিশ কর্মকর্তা