টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দরের অভ্যন্তরেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এর ফলে বন্দরের ভিতরে-বাইরে জাহাজ জট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বহির্নোঙরে পণ্য বোঝাই ৪০টির মতো মাদার ভ্যাসেল অলস অপেক্ষা করছে। অলস বসে আছে শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ। বন্দরে দেখা দেয়া জটের কবলে পড়তে যাচ্ছে কন্টেনার জাহাজও। সবকিছু মিলে প্রতিকূল পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্ককে হুমকির মুখে ফেলছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ৯২ শতাংশেরও বেশি পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়। জোয়ার-ভাটা নির্ভর চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে বড় আকৃতির মাদার ভ্যাসেলগুলো প্রবেশ করতে পারে না। সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট এবং ১৯০ মিটার লম্বা মাঝারি আকৃতির জাহাজ বন্দরের জেটিতে বার্থিং নিতে পারে। এর চেয়ে বড় জাহাজে পণ্য আনা হলে সেগুলো বহির্নোঙরে গভীর সাগরে অবস্থান করে। সেখান থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে দেশব্যাপী পরিবহন করা হয়। উন্মুক্ত সাগরে জাহাজের হ্যাজ খুলে ক্রেন দিয়ে পণ্য নিয়ে তা লাইটারেজ জাহাজে দেয়া হয়। এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয় খোলা অবস্থায়।
বৃষ্টি হলে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে ভিজে গেলে নষ্ট হবে এমন পণ্য বৃষ্টির সময় হ্যান্ডলিং পুরোপুরি বন্ধ থাকে। বহির্নোঙরে গম, কয়লা, মটরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল, সরিষা, সিমেন্ট ক্লিংকার প্রভৃতি পণ্য বেশি খালাস করা হয়। এর বাইরে গত কয়েক বছর ধরে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। বৃষ্টিতে পাথর হ্যান্ডলিংয়ে অসুবিধা না হলেও ক্লিংকার থেকে শুরু করে অন্যান্য সব পণ্য হ্যান্ডলিং বন্ধ করে রাখতে হয়। গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে তিন দিন ভারী বর্ষণ হয়েছে। বহির্নোঙরে কিছু কার্যক্রম চললেও দিনের বেশিরভাগ সময় অলস বসে থাকছে জাহাজ। বন্দরের ভিতরেও কাজের গতি কমে গেছে। বৃষ্টির সময় উন্মুক্ত স্থানে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না অনেক জাহাজে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরের ভিতরে ও বহির্নোঙরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাচ্ছে। দেখা দিয়েছে জট। বৃষ্টি লাগাতার হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।
বহির্নোঙরে কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বন্দরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বর্ষাকালে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। বৃষ্টিতে কাজের সমস্যা হয়। বহির্নোঙরে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জট হয়। বৃষ্টি বন্ধ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে।
লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের প্রধান নির্বাহী মাহবুব রশিদ বলেন, বৃষ্টির মধ্যে কাজ করা কঠিন। শ’খানেক লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে বলে জানান তিনি।