বন্দরে যুক্ত হলো আরো দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন

এসেছে তিনটি আরটিজিও, সংগ্রহ করা হচ্ছে ৯শ কোটি টাকার ১০৪ ইকুইপমেন্ট

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৮ মে, ২০২২ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের ইকুইপমেন্ট বহরে নতুন দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন তিনটি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেনও (আরটিজি)। গতকাল শনিবার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় দৈত্যাকৃতির ইকুইপমেন্টগুলো বহনকারী জাহাজ জিন হুয়া ১২-কে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে বার্থিং দেয়া হয়েছে।

আগামী জুনের মধ্যে আরো দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন ও তিনটি আরটিজি চট্টগ্রামে এসে পৌঁছবে। এই চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন অপারেশন শুরু করলে বন্দরের চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) এবং নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) পুরোপুরিভাবে বিশ্বের সর্বাধুনিক কন্টেনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের আওতায় চলে আসবে। প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় এসব যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। যন্ত্রপাতিগুলো পুরোপুরি অপারেশন শুরু করলে বন্দরের ইকুইপমেন্ট বহর অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সমৃদ্ধ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বর্তমানে ১৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ ১২৫টি ইকুইপমেন্ট রয়েছে। বন্দরের ইকুইপমেন্ট বহরে প্রথম গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয়েছিল ২০০৫ সালে। এরপর ধাপে ধাপে কর্তৃপক্ষ গ্যান্ট্রি ক্রেনের সংখ্যা বাড়িয়েছে। শোর টু শিপ কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট হচ্ছে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন। জেটিতে স্থাপন করা এসব ক্রেন জাহাজের ১৫ রো পর্যন্ত কন্টেনার খালাস ও বোঝাই করতে পারে। যেসব জাহাজের নিজস্ব ক্রেন রয়েছে সেগুলোতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়া কন্টেনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হলেও যেগুলোর নিজস্ব ক্রেন নেই (গিয়ারলেস) সেইসব জাহাজে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়া কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যায় না। আধুনিক জাহাজ নির্মাতারা কন্টেনার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অধিকাংশ জাহাজে ক্রেন স্থাপন করে না। গিয়ারলেস জাহাজ নির্মাণ করে। এতে করে বন্দরের কী গ্যান্ট্রি ক্রেনই কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে। চট্টগ্রাম বন্দরে একসময় গিয়ারলেস ভ্যাসেল না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা পাল্টে যাচ্ছে। যেকোনো ধরনের জাহাজের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বন্দরে পুরোপুরিভাবে তৈরি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটিতে ১৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। কী গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোর অবস্থা তুলনামূলক ভালো হলেও বন্দরের ১২৫টি ইকুইপমেন্টের অনেকগুলোরই আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেছে। এই অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ মোট ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় ২টি মোবাইল ক্রেন (১০০ টন), ২টি মোবাইল ক্রেন (৫০ টন), ২টি মোবাইল ক্রেন (৩০ টন), ১২টি মোবাইল ক্রেন (২০ টন), ২৩টি মোবাইল ক্রেন (১০ টন), ১১টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), ২১টি ফোর-হাই স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, ৬টি টু-হাই স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, ৪টি রিচ স্টেকার (লোড) ৪টি, ২টি কন্টেনার মুভার, ৪টি ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক (৪৫ টন), ২টি লগ হ্যান্ডলার-স্টেকার, ৪টি ফর্ক লিফট ট্রাক (২০ টন) ১টি ম্যাটেরিয়াল-মাল্টি হ্যান্ডলার (৩৫ টন), ২টি লো বেড ট্রেইলার, ২টি হেভি ট্র্যাক্টর পাওয়ার রয়েছে।

এর মধ্যে শুধুমাত্র ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনার জন্য খরচ হবে আড়াইশ কোটিরও বেশি টাকা। এই ৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেনের মধ্যে গতকাল ২টি গ্যান্ট্রি ক্রেন চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। একই সাথে এসেছে ৩টি আরটিজি। পাঁচটি ইকুইপমেন্ট নিয়ে আসা জাহাজকে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের ৫ নম্বর জেটিতে বার্থিং দেয়া হয়েছে। আগামী মাসে আরো দুটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ও তিনটি আরটিজি নিয়ে অপর একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন বন্দরের বহরে যুক্ত হলে সিসিটির মতো এনসিটিও পুরোপুরি গ্যান্ট্রি ক্রেনের আওতায় চলে আসবে। বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনই সর্বাপেক্ষা আধুনিক এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি হিসেবে বিবেচিত।

অপরদিকে ইয়ার্ডে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্ট। বন্দর কর্তৃপক্ষ ১১টি আরটিজি সংগ্রহ করছে। এর মধ্যে গতকাল ৩টি, আগামী মাসে আরো ৩টি আরটিজি এবং পরবর্তীতে বাকি ৫টি আরটিজি বন্দরের বহরে যুক্ত হচ্ছে।

বর্তমানে চট্টগ্রামে বন্দরে প্রতিটি ৮৪ টন ধারণক্ষমতার ৩টি মোবাইল ক্রেন এতদিন সর্বোচ্চ ক্ষমতার ক্রেন ছিল। ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় কিছুদিন আগে ২টি ১০০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেন বন্দরের বহরে যুক্ত হয়। ওই দুটি ক্রেন ইতোমধ্যে অপারেশন শুরু করেছে। একই সাথে ৫০ টন ধারণক্ষমতার দুটি ক্রেনও বন্দরের বহরে অপারেশন শুরু করেছে।

গতকাল বিশেষ ব্যবস্থায় ২টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং তিনটি আরটিজি বহনকারী জাহাজকে বন্দরে বার্থিং দেয়া হয়। বহির্নোঙর থেকে ইকুইপমেন্টবাহী জাহাজটিকে জেটিতে আনার সময় বন্দর চ্যানেলের জাহাজ মুভমেন্টসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। সরিয়ে নেয়া হয়েছিল অনেকগুলো নৌযান। বিমান চলাচলের ক্ষেত্রেও সতকর্তা অবলম্বন করতে বলা হয়েছিল। ৭০ মিটার বা প্রায় ২৩০ ফুট উঁচু কী গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোর বাহু বেশ প্রশস্ত। টাগ বোট ও উদ্ধারকারী জাহাজসহ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থার মধ্য দিয়ে গতকাল বিকাল ৫টায় ইকুইপমেন্টবাহী জাহাজকে বার্থিং দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (যান্ত্রিক) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ২টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ও ৩টি আরটিজি আসার কথা জানিয়ে বলেন, আগামী মাসে একই রকমের আরো একটি চালান আসবে। এ নিয়ে ১০৪টি ইকুইপমেন্টের মধ্যে ৯টি ইকুইপমেন্ট বন্দরে পৌঁছাল।

একটি ক্রেন বানাতে ৯ মাসের মতো সময় লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অর্ডার কনফার্ম করার পর কী গ্যান্ট্রি ক্রেন বানানো শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৪টি ক্রেনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। দুটি চলে এসেছে। বাকি দুটি আগামী মাসে আসবে। সবগুলো ইকুইপমেন্ট বহরে যুক্ত হলে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে গতি আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ইকুইপমেন্টগুলো নির্দিষ্ট সময়ে বহরে যুক্ত হচ্ছে। গতকাল আসা ২টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং ৩টি আরটিসি আগামী ১০ দিনের মধ্যে বন্দরে অপারেশন শুরু করবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাকে ভালোবাসি প্রতিদিন
পরবর্তী নিবন্ধকবিগুরুর ১৬১তম জন্মজয়ন্তী আজ