চট্টগ্রাম বন্দরে বসানো হবে আরও চারটি কন্টেনার স্ক্যানার মেশিন। আমদানি-রপ্তানি কাজে গতি আনতে বন্দর ব্যবহারকারীরা দীর্ঘ দিন ধরে বন্দরের ১২টি গেটে ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানার বসানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেই দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং চট্টগ্রাম কাস্টমসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যও রাখেন। এবার বন্দরে আগের পাঁচটি ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানারের সাথে আরো চারটি যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে সংস্থাটি। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, মোট ছয়টি ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানার মেশিন কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৫টি ফিক্সড কন্টেনার এবং দুটি মোবাইল স্ক্যানারে চলছে বন্দরের কার্যক্রম। বন্দরের ৪ নম্বর, ৫ নম্বর এবং সিসিটি-২ টার্মিনালে স্থাপিত তিনটি ফিক্সড স্ক্যানার আগে থেকেই ছিল। সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্দরের এক নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) তিন নম্বর গেটে স্থাপন করা হয় আরো দুটি ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানার। এছাড়া সিসিটি ২ ও জিসিবি ২ নম্বর গেটে রয়েছে মোবাইল স্ক্যানার।
আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি পণ্য স্ক্যানিং করে খালাস করা হলে কোনো আমদানিকারক এক পণ্য এনে অন্য পণ্য ঘোষণা দিয়ে বিদেশে অর্থপাচার করতে পারবেন না। আবার বেশি দামের পণ্য এনে কম দামের পণ্য হিসেবে অথবা উচ্চ শুল্ককরের পণ্য আমদানি করে বিনা শুল্ক অথবা কম শুল্কের পণ্য হিসেবে ছাড় করাতে পারবেন না। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি অর্থ পাচারও কমবে। অস্ত্র, গোলাবরুদ কিংবা বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য এনে কেউ খালাস করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় অঘোষিত ও বিস্ফোরক জাতীয় পণ্য আমদানির পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, প্রতি বছর কাস্টম ডে এলে বন্দরের প্রতিটি গেটে কন্টেনার স্থাপন করার কথা বলা হয়। এটি শুনে আসছি অনেক বছর ধরে। কিন্তু বাস্তবে এখনো ৭ গেটে স্ক্যানার নেই। প্রতিটি গেটে স্ক্যানার থাকলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. তোফায়েল আহমেদ আজাদীকে বলেন, ফিক্সড কন্টেনার কেনার বিষয়গুলো সরাসরি এনবিআর থেকে দেখা হয়। তবে শুনেছি, এনবিআর দেশের বেশ কয়েকটি শুল্ক স্টেশনের জন্য ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানার কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে চারটি পাবে চট্টগ্রাম বন্দর। এর আগে গত বছর দুটি আধুনিক প্রযুক্তির ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানার বসানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তির স্ক্যানারগুলো এক্স-রে বা গামা-রশ্মি ইমেজিং প্রক্রিয়ায় কন্টেনার খোলা ছাড়াই এর ভেতরের রঙিন ছবি তুলতে পারবে। এসব মেশিনে স্ক্যানার ছাড়াও কন্টেনারের ওজন পরিমাপ, রেডিও পোর্টাল মনিটর এবং ইমেজিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত থাকে। নতুন স্ক্যানারগুলো ‘বোথ ওয়ে’ স্ক্যান ডিরেকশনে স্ক্যানিং করতে সক্ষম। অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয় কন্টেনার এই স্ক্যানিং মেশিনে করা যায়।
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস মডারাইজেশন অ্যান্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট) ইমাম গাজ্জালী আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৪টি, বেনাপোল এবং ভোমরার জন্য একটি করে মোট ৬টি ফিক্সড কন্টেনার কিনতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এসব স্ক্যানার কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮২ কোটি টাকা; যার মধ্যে মেইনটেনেন্সও অন্তর্ভুক্ত। করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয়, এই মাসের ১৭ তারিখ অথবা আগামী ৩ আগস্ট দরপত্র খোলা হবে। এই ছয়টি স্ক্যানার কেনার পর পরবর্তীতে আরো সাতটি কেনা হবে।