যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বন্দরে ‘ফিউমিগেশন’ বা বিষবাষ্পীকরণের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এতে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের ‘শত শত কোটি টাকা সাশ্রয়’ হওয়ার পাশপাশি পাঁচ দিন অপেক্ষার অবসান হবে।
কটন বোল উইভিল নামের এক ধরনের পতঙ্গ থাকত বলে প্রায় দুই যুগ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা বন্দরে নামার পর ফিউমিগেশন বা বিষবাষ্পীকরণের বাধ্যবাধকতা ছিল। ২০১১ সালের উদ্ভিদ সংগনিরোধ আইনেও ওই বাধ্যবাধকতা বজায় রাখা হয়। খবর বিডিনিউজের।
গত রোববার কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার এ বিষয়ে বলেন, কটন বোল উইভিল মুক্ত করার জন্য আমরা ইউএস–এর পুরো কনসাইনমেন্টকে আটকে রেখে ১০ দিন ধরে বিষবাষ্পীকরণ করতাম দীর্ঘদিন থেকে। সুতরাং দীর্ঘদিন তাদের দাবি ছিল, ফিউমিগেশনের প্রয়োজন নাই। ফিউমিগেশন কেন করা লাগত, তার ব্যাখ্যা দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমদানি করা তুলা ১০ দিন বিষবাষ্পের মাধ্যমে রেখে দেওয়া হত, যেন তুলার ভেতরে জীবন্ত কোনো পতঙ্গ বা ক্ষতিকর পোকা থাকলে মারা যায়।
এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন আমদানি নীতির খসড়া অনুমোদনের বিষয় জানাতে গিয়ে তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমেরিকার তুলার মধ্যে এক ধরনের পোকা থাকে। এ পোকা যদি এয়ারে চলে যায় তাহলে আমাদের দেশের শুধু তুলা না অন্য প্লান্টেও বা ফলেও ম্যাসিভ নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে।
কটন বোল উইভিলকে বাংলায় বলে তুলার ভোমরা পোকা। এ পোকার আক্রমণে তুলার উৎপাদন ব্যাহত হয়। তুলার ভেতরে ডিম বা লার্ভা থেকে গেলে এ পতঙ্গ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়াতে পারে।
রোববার মার্কিন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর কৃষি সচিব ওয়াহিদা জানান, গতবছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি কারিগরি দল যুক্তরাষ্ট্র যায়। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ঘুরে তারা দেখেন, যুক্তরাষ্ট্রে তুলাকে কটন বোল উইভিল মুক্ত করা হয়েছে। এবং তারা যে প্রেশারে কটন পাঠায় আমাদের, তাতে কোনো পোকার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নাই। সবকিছু মিলিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিয়েছে, এটা মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে।
ওয়াহিদা আক্তার বলেন, কারিগরি দলের সুপারিশ পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে সংগনিরোধ আইনে সংশোধন আনে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত ১৬ মে ওই সংশোধনীর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর থেকে ইউএস–এর তুলা আমাদের দেশে আসলে ফিউমিগেশন লাগবে না, তবে এপিএইচআইএস যেটা, তাদের কোয়ারেন্টিন অথরিটি থেকে একটা সার্টিফিকেট থাকবে। যে সার্টিফিকেটে বলা থাকবে, এই তুলা সম্পূর্ণ উইভিল মুক্ত, এই ধরনের সার্টিফিকেট হলেই আমরা ছেড়ে দেব।
দূতাবাস বলছে, ফিউমিগেশনের বাধ্যবাধকতা থাকায় একদিকে আমদানিকারকের কাছে তুলা পৌঁছাতে দেরি হতে, অন্যদিকে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা বাড়তি খরচ হত। আমেরিকা থেকে আমদানি করা উচ্চমানের ও টেকসই তুলার ফিউমিগেশন বা বিষবাষ্পীকরণের মাধ্যমে পতঙ্গমুক্ত করার শর্ত বাতিল করায় এখন আমেরিকান তুলা সরাসরি ও সহজেই বাংলাদেশি আমদানিকারকদের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্পের সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারবে। ফলে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক খাতের উল্লেখযোগ্য সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।