বন্দরে ঢাকা আইসিডিমুখী কন্টেনারের পাহাড়

ইঞ্জিনসহ নানা সংকটে ট্রেনে কন্টেনার কম পরিবহন করায় এই সংকট । আমদানিকারকদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শিল্পকারখানার কাঁচামাল আটকে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২৫ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যবোঝাই ঢাকা আইসিডিমুখী কন্টেনারের বিশাল পাহাড় গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কন্টেনার পরিবহনের চাহিদা পূরণে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন যেখানে গড়ে দুইশ’ টিইইউএসএর বেশি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডিতে নেয়া হতো, এখন তা একশ’টির কাছাকাছিতে নেমে এসেছে। এতে করে প্রতিদিনই আইসিডিমুখী কন্টেনারের জটলা বাড়ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রেলওয়েকে কন্টেনার পরিবহন বাড়ানোর অনুরোধ জানালেও ইঞ্জিন সংকটসহ নানা সংকটে রেলওয়ের পক্ষে পূর্ণ গতিতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকার কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকায় বহুমুখী সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে আমদানিকারকদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পকারখানার কাঁচামাল আটকে থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ঢাকা আইসিডিগামী কন্টেনারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্দরের আইসিডিগামী কন্টেনারের ধারণক্ষমতা ৮৭৬ টিইইউএস। কিন্তু গতকাল ওই ইয়ার্ডে আইসিডিগামী কন্টেনার ছিল ১৩৮৪ টিইইউএস। ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। এর মাঝে বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোতে আরো অন্তত এক হাজার টিইইউএস আইসিডিগামী কন্টেনার রয়েছে। এসব কন্টেনার ঠিকঠাকভাবে সামাল দেয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য অন্তত কঠিন হয়ে উঠবে।

পণ্য আমদানির সময় তা কোত্থেকে খালাস করা হবে তা উল্লেখ করতে হয়। ঢাকা অঞ্চলের আমদানিকারকেরা তাদের পণ্য আমদানির সময় ঢাকা আইসিডির নামোল্লেখ করে থাকেন। যা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ থেকে নামানোর পর ঢাকা আইসিডিতে পাঠিয়ে দেয়। ওখান থেকে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক চালানটি খালাস করে। ঢাকা অঞ্চলের ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা কমলাপুর আইসিডির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করছে। এসব পণ্য ঢাকা আইসিডি থেকে খালাস করতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যভর্তি এসব কন্টেনার ঢাকা আইসিডিতে প্রেরণ করা সম্ভব না হওয়ায় ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের ভোগান্তি বেড়েছে। এসব কন্টেনারের বেশিরভাগই তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল। কন্টেনারগুলো সময়মতো না পৌঁছানোর ফলে এসব কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কোন কন্টেনার জাহাজ থেকে নামানোর পর চারদিন ফ্রি টাইম পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে কন্টেনার খালাস করে নিলে মাশুল দিতে হয় না। কিন্তু এখন দিনের পর দিন ঢাকামুখী কন্টেনার আটকে থাকায় এসব কন্টেনারের বিপরীতে হাজার হাজার ডলার মাশুল আদায় করা হচ্ছে। অথচ রেলওয়ের সংকটের কারণেই এসব কন্টেনার বন্দরে আটকা পড়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বন্দর থেকে কন্টেনার পরিবহন বাড়ালে এই সংকটের সুরাহা হয়ে যায়। কিন্তু ইঞ্জিন সংকটসহ নানা কারনে রেলওয়ে চাহিদা অনুযায়ী কন্টেনার খালাস সরবরাহ নিতে পারছে না বলে জানিয়েছে।

১৯৮৭ সালে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে বত্রিশ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা ঢাকা আইসিডিতে কন্টেনার পরিবহন পুরোপুরি রেলওয়ের উপর নির্ভরশীল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আইসিডিগামী কন্টেনারগুলো নিয়ে ঢাকা আইসিডিতে পৌঁছে দেয়। ওখান থেকে কাস্টমস প্রক্রিয়া শেষ করে চালান খালাস করা হয়। রেলওয়ে প্রতিদিন চারটি ট্রেনে গড়ে ২শ’ টিইইউএসএর বেশি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডিতে নিয়ে যায়। কিন্তু ইঞ্জিন সংকটের কারণে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডিতে মাত্র দুইটি ট্রেন চালাচ্ছে। এর ফলে কন্টেনার পরিবহন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কন্টেনার পরিবহন স্বাভাবিকভাবে না হওয়ায় বন্দরে প্রতিদিনই জটলা বাড়ছে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনভাবেই তা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে বলেন যে, তাদের ইঞ্জিনের সংকট প্রকট। বিভিন্ন দিক হিসেব নিকেশ করে প্রায়োরিটি নির্ধারণ করে তাদেরকে ট্রেন পরিচালনা করতে হচ্ছে। তবে তিনটি ট্রেন চালানোর মাধ্যমে আটকে পড়া কন্টেনারের সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে আনা যায় কিনা তার চেষ্টা করা হবে বলেও রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও উদ্বেগ রয়ে গেছে : যুক্তরাষ্ট্র
পরবর্তী নিবন্ধউত্তর পাহাড়তলী ও উত্তর কাট্টলীর ভোটাররা থাকতে চায় চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনে