রমজানকে সামনে রেখে ঢাকা আইসিডিমুখী কন্টেনারের বিশাল পাহাড় গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কন্টেনার পরিবহনের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন যেখানে গড়ে দুইশ’ টিইইউএস–এর বেশি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডিতে নেয়া হতো, এখন তা একশ’টির কাছাকাছিতে নেমে এসেছে। এতে করে প্রতিদিনই আইসিডিমুখী কন্টেনারের জটলা বাড়ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রেলওয়েকে সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি ঢাকা আইসিডির কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি কিংবা পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল থেকে খালাসের অনুমোদন দেয়ার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ঢাকা আইসিডিগামী কন্টেনারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্দরের আইসিডিগামী কন্টেনারের ধারণক্ষমতা ৮৭৬ টিইইউএস। কিন্তু গতকাল ওই ইয়ার্ডে আইসিডিগামী কন্টেনার ছিল ১৬শ’ টিইইউএস। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় দিশেহারা। এরমাঝে বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোতে আরো অন্তত এক হাজার টিইইউএস আইসিডিগামী কন্টেনার রয়েছে। এসব কন্টেনার ঠিকঠাকভাবে সামাল দেয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য অন্তত কঠিন হয়ে উঠবে।
পণ্য আমদানির সময় তা কোত্থেকে খালাস করা হবে তা উল্লেখ করতে হয়। ঢাকা অঞ্চলের আমদানিকারকেরা তাদের পণ্য আমদানির সময় ঢাকা আইসিডির নামোল্লেখ করে থাকেন। যা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ থেকে নামানোর পর ঢাকা আইসিডিতে পাঠিয়ে দেয়। ওখান থেকে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক চালানটি খালাস করে। রমজানকে সামনে রেখে পণ্য আমদানি বেড়েছে। ঢাকা অঞ্চলের ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাও প্রচুর পণ্য আমদানি করছে। যা আইসিডিতে প্রেরণ করা সম্ভব না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের নির্ধারিত ইয়ার্ডে জড়ো হচ্ছে।
১৯৮৭ সালে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে বত্রিশ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা ঢাকা আইসিডিতে কন্টেনার পরিবহন পুরোপুরি রেলওয়ের উপর নির্ভরশীল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আইসিডিগামী কন্টেনারগুলো নিয়ে ঢাকা আইসিডিতে পৌঁছে দেয়। ওখান থেকে কাস্টমস প্রক্রিয়া শেষ করে চালান খালাস করা হয়। রেলওয়ে প্রতিদিন চারটি ট্রেনে গড়ে ২শ’ টিইইউএস–এর বেশি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডিতে নিয়ে যায়। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে ইঞ্জিন সংকটের কারণে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডিতে মাত্র দুইটি ট্রেন চালাচ্ছে। এর ফলে কন্টেনার পরিবহন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কন্টেনার পরিবহন স্বাভাবিকভাবে না হওয়ায় বন্দরে প্রতিদিনই জটলা বাড়ছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে। বৈঠকে বন্দরের পক্ষ থেকে দৈনিক চারটি ট্রেন দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনভাবেই তা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে বলেন যে, তাদের ইঞ্জিনের সংকট প্রকট। বিভিন্ন দিক হিসেব নিকেশ করে প্রায়োরিটি নির্ধারণ করে তাদেরকে ট্রেন পরিচালনা করতে হচ্ছে। তবে তারা দুয়েকদিনের মধ্যে অন্তত তিনটি ট্রেন চালানো যায় কিনা তা নিয়ে চেষ্টা করবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ঢাকা আইসিডির নামে আমদানিকৃত কন্টেনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি খালাস কিংবা ঢাকার পানগাঁও থেকে খালাসের অনুমোদন দেয়ারও অনুরোধ জানান। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন বলেও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, সংকট প্রকট। আমরা দ্রুত বিষয়টি সুরাহা করে আমদানি বাণিজ্য গতিশীল রাখার চেষ্টা করছি। তিনি ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় আনার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এর বিকল্প হিসেবে আইসিডির কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এবং পানগাঁও টার্মিনাল থেকে খালাসের অনুমোদন দিলে কিছুটা সুফল পাওয়া যাবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ট্রেন চলাচল বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বন্দর ও পানগাঁও থেকে কন্টেনার খালাসের অনুমোদন দেয়ার জন্য আজ কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে জরুরি পত্র দেবে বলেও বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান।