বন্দরের মাথাব্যথা ভলগেট

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ

দুই শতাধিক অবৈধ বাল্কহেড মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম কাস্টমস, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেক্টরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মাথাব্যথার কারণ এসব বাল্কহেড বন্ধ করা যাচ্ছে না। সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিয়ম না মেনে বাল্কহেড দিয়ে বহির্নোঙর থেকে হাজার হাজার টন পণ্য পরিবহন করছে। অভিযোগ রয়েছে, ঘোষণা বহির্ভূত আনা পণ্যও এসব বাল্কহেড নিয়ে যাচ্ছে। বছরের পর বছর চলা অবৈধ এসব নৌযান বন্দরকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
বন্দরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাল্কহেড বা ভলগেট বিশেষ ধরনের নৌযান। নেভাল আর্কিটেক্টচারাল ডিজাইন ছাড়াই এগুলো তৈরি করা হয়। এসব নৌযান তৈরির সাথে জড়িত মিস্ত্রি কিংবা ওয়েল্ডারদের কারোর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে এসব বাল্কহেড তৈরি হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বল্প দূরত্বে বালি পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয় এসব বাল্কহেড। যেসব এলাকায় লাইটারেজ জাহাজ বা যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল রয়েছে সেখানে ভলগেট চলাচল নিষিদ্ধ। দেশের কোথাও ভলগেটের বে ক্রসিংয়ের অনুমোদন নেই। বন্দর চ্যানেলে ভলগেট চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বহির্নোঙরে দীর্ঘদিন ধরে দুই শতাধিক ভলগেট চলাচল করছে। এসব ভলগেট বন্দর চ্যানেলেও প্রবেশ করে মালামাল পরিবহন করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভলগেটের চলাচল বন্দর চ্যানেল ও বহির্নোঙরকে হুমকির মুখে ফেলছে।
অভিযোগ করা হয়েছে, এক শ্রেণির আমদানিকারকের পক্ষে এজেন্ট কিংবা পণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিরা গোপনে লাইটার জাহাজের বিকল্প হিসেবে ভলগেট ব্যবহার করছেন। টনপ্রতি একশ টাকা ভাড়া বাঁচানোর জন্য ভলগেট ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে প্রতি টন পণ্য লাইটারেজ জাহাজে পরিবহন করতে ভাড়া আদায় করা হয় ৫৪৮ টাকা। ভলগেটে প্রতি টন পণ্য ৪৫০ টাকায় পরিবহন করা যায়। ভলগেটের মাধ্যমে বহির্নোঙর থেকে পাথর ও কয়লা পরিবহন করা হয়। এক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা এবং ঘোষণা বহির্ভূতভাবে আনা পণ্য পরিবাহিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বিদেশ থেকে মাদার ভ্যাসেলে বাড়তি পণ্য নিয়ে এসে কোনো ধরনের শুল্ক পরিশোধ না করে অবৈধ ভলগেটে তুলে দিয়ে পার করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ না থাকলে কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ভলগেটে পণ্য পরিবহন অবৈধ। শুধু পণ্য পরিবহনই নয়, এখানে তাদের চলাচলেরও কোনো অনুমোদন নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে। অবৈধ ভলগেট বন্ধ করার ব্যাপারে আরো বড় পরিসরে অভিযান চালানো হবে।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ বলেন, বালি পরিবহনের জন্য তৈরি ভলগেটে পণ্য পরিবহনের অনুমোদন নেই। ভলগেটে প্রশিক্ষিত নাবিক নেই, মাস্টার নেই। সুকানিরা ভলগেট পরিচালনা করে। এটি বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, ভলগেটে যখন বালি বোঝাই হয়, তখন সেগুলো প্রায় ডুবো ডুবো অবস্থায় চলাচল করে। বর্তমানে পণ্য বোঝাই করে একই কায়দায় চলাচল করছে, যা বিপর্যয় সৃষ্টির শংকা তৈরি করছে। ইতোমধ্যে বহির্নোঙরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক ভলগেট ডুবেছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোস্টগার্ডের সক্ষমতা আরো বাড়ল : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধতার মতো শিল্পীর মৃত্যু হয় না : ববিতা