পণ্যবাহী একটি মাদারভ্যাসেল চ্যানেলের পাশ্বস্থ বয়ায় ধাক্কা খেয়ে আটকে যাওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর বড় ধরনের অঘটন থেকে রক্ষা পেয়েছে। চীনের পতাকাবাহী একটি জাহাজকে বহির্নোঙর থেকে জেটিতে ফিরিয়ে আনার সময় বোট ক্লাবের পাশে নবনির্মিত পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) পাশে এই ঘটনা ঘটে। ভর জোয়ার থাকার সুবিধায় বন্দরের ৪টি টাগ দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে জাহাজটিকে উদ্ধার করে। বয়াসহ জাহাজটিকে টেনে বন্দরের জেটির পরিবর্তে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে মেরামত শেষে জাহাজটি বন্দরের জেটিতে এনে পণ্য খালাস করবে। অবশ্য স্টিল কয়েল বহনকারী জাহাজটি থেকে বহির্নোঙরেও পণ্যগুলো খালাসের সুযোগ রয়েছে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, কসকো শিপিং লাইন্সের চীনের পতাকাবাহী এমভি ‘শি জি ফেং’ নামের একটি জাহাজ ২৫ হাজার টন আমদানিকৃত স্টিল কয়েল নিয়ে গত ২০ মে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। জাহাজটিকে বন্দরের ৬ নম্বর জেটিতে বার্থিং দিয়ে স্টিল কয়েল খালাস করার কাজ শুরু করা হয়। ২৬ জুন সকাল পর্যন্ত জাহাজটি থেকে ২৪ হাজার ৬শ’ টন স্টিল কয়েল খালাস করা হয়। জাহাজটিতে মাত্র ৪শ’ টন স্টিল কয়েল থাকা অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বন্দরে সর্বোচ্চ এলার্ট–৪ ঘোষণা করা হলে ১৯টি জাহাজ জেটি থেকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই ১৯টি জাহাজের একটি এমভি শি জি ফেং। ঘূর্ণিঝড় সামলে গতকাল সকালের জোয়ারে এমভি শি জি ফেং’সহ মোট ১১টি জাহাজকে বন্দরে জেটিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছিল। এর মধ্যে ১০টি জাহাজ ঠিকঠাকভাবে জেটিতে এসে নোঙর করলেও দুপুর দেড়টা নাগাদ এমভি শি জি ফেং নামের জাহাজটি উপরোক্ত স্থানে আটকে যায়।
বন্দর সূত্র বলেছে, মাত্র ৪শ’ টন পণ্য নিয়ে অনেকটা খালি জাহাজটি নদীর ঢেউয়ের সাথে বেশ দুলছিল। ঢেউয়ের তোড়ে জাহাজটি চ্যানেলের পাশ্বস্থ বন্দর কর্তৃপক্ষের বয়াতে গিয়ে ধাক্কা দেয়। এতে বয়াটি জাহাজের প্রোপেলারের (পাখা) সাথে আটকে গেলে জাহাজটি আটকা পড়ে। প্রোপেলার লক হয়ে যাওয়ায় জাহাজটির স্টিয়ারিং কাজ করছিল না। ফলে জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চ্যানেলের পাশে অচল হয়ে আটকা পড়ে।
বন্দরের পাইলট এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন নানাভাবে চেষ্টা করেও জাহাজটির স্টিয়ারিং সচল করতে পারেননি। এতে করে জাহাজটিকে আর জেটিতে আনা সম্ভব হয়নি। জাহাজটি চ্যানেলের একপাশে আটকা পড়ায় অন্যান্য জাহাজ চলাচলে কোন সমস্যা না হলেও বড়সড় জাহাজটি আটকা পড়ায় বন্দরে আতংক তৈরি হয়। পরবর্তীতে বন্দরের চারটি শক্তিশালী টাগ বোট কান্ডারি–৩, কান্ডারি–৪, কান্ডারি–৭ ও কান্ডারি–১০ গিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে বিকেল চারটা নাগাদ জাহাজটিকে উদ্ধার করে। ওই সময় ভর বয়ার চেইন কেটে দেয়া হয়। এছাড়া জোয়ার থাকায় জাহাজটিকে উদ্ধারে সুবিধা হয়েছে বলেও বন্দর সূত্র জানিয়েছে। তবে ধাক্কা দেয়ার পর বয়াটি জাহাজটির প্রফেলারের সাথে আটকে থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষের টাগ বোট জাহাজটিকে উদ্ধার করার সময় বয়াটিও প্রফেলরের সাথে উঠে আসে। বন্দরের ৪টি টাগবোট বয়াসহ জাহাজটিকে টেনে বহির্নোঙরে নিয়ে যায়। জাহাজটি অচল অবস্থায় বহির্নোঙরে অবস্থান করছে।
শিপিং বিশেষজ্ঞ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রোপেলার থেকে বয়া আলাদা করতে হবে। পরবর্তীতে জাহাজটির প্রোপেলারের বাঁকা হয়ে যাওয়া পাখা ঠিকঠাক করে কিংবা অন্য কোন অসুবিধা থাকলেও সেগুলো মেরামত করে জাহাজটিকে চলার উপযোগী করতে হবে। এতে কয়েকদিন সময় লাগবে। এরপর জাহাজটিকে জেটিতে এনে ৪শ’ টন স্টিল কয়েল খালাস করা হবে। অথবা বহির্নোঙরে লাইটারেজ জাহাজের সাহায্যেও স্টিল কয়েলগুলো খালাস করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে জাহাজটি আর জেটিতে না এসে বহির্নোঙর থেকেই ফিরতি পথ ধরবে।
জাহাজটি যদি বন্দর চ্যানেলে আটকা পড়তো কিংবা ডুবে যেতো তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় ধরণের সংকটে পড়তো। ভাগ্যক্রমে একপাশে হওয়ায় এবং জাহাজটি ফুটো না হওয়ায় অল্পের উপর দিয়ে গেছে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জেটির ক্ষতি এড়াতে বন্দরের জেটি থেকে ১৯টি জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গতকাল সকালের জোয়ারে ১১টি এবং রাতের জোয়ারে বাকি জাহাজগুলো বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করেছে।