চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিদর্শনে আইএসপিএস প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম আসছে। আইএসপিএস কোডের চার সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রামে অবস্থান এবং বন্দর ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করে নিরাপত্তার বিষয়টি মূল্যায়ন করবে। এর আগে আইএসপিএস টিম সাতবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছে। সর্বশেষ গত ২০২২ সালের আগস্ট মাসে আইএসপিএস টিম চট্টগ্রামে এসেছিল।
সূত্র জানিয়েছে, যেসব বন্দর থেকে আমেরিকায় পণ্য পাঠানো হয় ওসব বন্দরে আমেরিকান কোস্টগার্ড একটি বিশেষ একটি নিরাপত্তা সূচক অনুসরণ করতে হয়। এটাকে বলা হয় ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি কোড বা আইএসপিএস কোড।
মূলতঃ ২০০১ সালে আমেরিকার নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর এ আমেরিকা এই কোড বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০৪ সাল থেকে আইএসপিএস কোড বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করেছিল ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন বা আইএমও। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের আড়ালে যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না ঘটে, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) আইএসপিএস কোড বাস্তবায়ন করে। চট্টগ্রাম বন্দর এই কোডের কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন করছে শুরু থেকেই।
এই কোড বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং তা ধরে রাখার উপরে আইএসপিএস টিম বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করে রিপোর্ট প্রদান করে। যে সব বন্দরে কোড অনুসরণ পুরোপুরি হয় না সেসব বন্দরকে একটি সময় দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোডের শর্ত পূরণের সময় দেয়া হয়। যে সব বন্দর এতে ব্যর্থ হয় সেগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। কালো তালিকাভুক্ত বন্দর দিয়ে আমেরিকার কোন পণ্য পরিবহন করা যায় না।
২০০৪ সাল থেকে আমেরিকান কোস্টগার্ডের আইএসপিএস টিম চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করছে। ইতোপূর্বে তারা যেসব শর্ত পূরণের তাগাদা দিয়েছিল বন্দর সর্বাধুনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তা পূরণ করে আসছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের আগস্ট মাসেও আইএসপিএস টিমের দুই সদস্য কয়েকটি আইসিডিসহ চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পরিদর্শন করে সন্তোষজনক রিপোর্ট প্রদান করেছিলেন। প্রায় আড়াই বছরের মাথায় আবারো আইএসপিএস কোডের চার সদস্যের একটি টিম চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে টিমের সদস্যরা চট্টগ্রামে অবস্থান করে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ড, জেটি, সিএফএস (কন্টেনার ফ্রেইট স্টেশন), বন্দর গেইট, সিসিটিভি ক্যামেরা, বন্দরের সিকিউরিটি বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা এবং পোর্ট ফ্যাসিলিটিজ এর আওতাধীন কয়েকটি আইসিডি পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। বিশেষ করে বন্দরে হ্যান্ডলিংকৃত পণ্য স্ক্যানিং, সিসিটিভি ক্যামেরা, লোকবল, পণ্য তল্লাশির ধরণসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়গুলো তারা দেখে থাকেন। ইউএস কোস্ট গার্ডের লেঃ কমান্ডার খেইম ভি নাজির নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদলে মার্টিন এস ডুনুহুই, ইরভিং এ চিনট্রন এবং মিজ ক্রামির রয়েছেন। উক্ত চারজনই ইউএস কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা।
এই ব্যাপারে গতকাল নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আইএসপিএস কোডের টিম আসা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এরা আগেও এসেছেন। আমাদের বন্দর এবং বন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম দেখে যান। গতবারও তারা আমাদের বন্দরগুলোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, খুশী হয়েছিলেন। এবারও নিশ্চয় তারা সন্তুষ্ট হবেন। কারণ আইএসপিএস কোড অনুসরণ এবং বাস্তবায়নে আমাদের বন্দর যথেষ্ট দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে। এক্ষেত্রে কোন ধরণের গাফিলতি কখনো করা হয় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।