বন্দরের নতুন ট্যারিফে শিপিং এজেন্টরা চাপে

ধাপে ধাপে কার্যকর করার অনুরোধ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) নতুন ট্যারিফ কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএএ)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ট্যারিফের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, আকস্মিকভাবে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এই নতুন ট্যারিফের কারণে শিপিং এজেন্টরা চাপে পড়েছে। এতে শুধু আর্থিকই নয়, ব্যবসা বাণিজ্যও অপ্রত্যাশিত সংকটের মুখে পড়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে বলা হয় যে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর এসআরও নং ৩৬৪ এর মাধ্যমে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পরদিনই ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন ট্যারিফ কার্যকর করা হয়েছে। অথচ ২৫ আগস্ট নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, বন্দর কার্যক্রমে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ ও আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। তাই ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে ধারণা ছিল বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

বিএসএএ চিঠিতে উল্লেখ করে যে, ঘোষিত নতুন ট্যারিফে গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ হারে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, যা অতিরিক্ত এবং অযৌক্তিক। সিপিএর ৬০টি ট্যারিফ আইটেমের মধ্যে ২৫টি সেবার হার মার্কিন ডলারে নির্ধারিত। ১৯৮৬ সালে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৩০৩২ টাকা, যা বর্তমানে ১২০ টাকার উপরে। তাই সময়ের সঙ্গে ট্যারিফ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাড়ছে। এর পাশাপাশি ২০০৭ ও ২০০৮ সালে কয়েকটি সেবার ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে ডলার নির্ভর ট্যারিফ কাঠামো আবারও চাপ সৃষ্টি করছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সামপ্রতিক সময়ে বন্দর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচও ব্যাপক বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাইভেট অফডকের চার্জে ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি, বার্থ অপারেটরদের চার্জে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ ট্যাঙ আরোপসহ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজজট। জাহাজ বিলম্বের কারণে প্রতিদিন একেকটি জাহাজের ১৫ থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে খালি কন্টেনার সংরক্ষণ ও যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত থাকার খরচও বাড়ছে।

সংগঠনটি বলছে, আন্তর্জাতিক ভাড়া একদিনে সমন্বয় করা সম্ভব নয়। এ ধরনের ভাড়া অনেক আগেই চুক্তি, প্রকাশিত ট্যারিফ ও দীর্ঘমেয়াদি কোটেশনের মাধ্যমে নির্ধারিত থাকে। হঠাৎ করে বাড়তি চার্জ আরোপ করলে তা চুক্তি ভঙ্গের শামিল হবে, গ্রাহকের আস্থা নষ্ট করবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করবে।

বিএসএএ মনে করে, নতুন ট্যারিফের প্রভাব পুরো সাপ্লাই চেইনের উপর পড়বে। এতে আমদানিরপ্তানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ব্যবসা খরচ বাড়বে এবং দেশের সার্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশি প্রিন্সিপালরাও বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়াবে, যা আগেই বিভিন্ন বৈঠকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল।

সংগঠনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে বিএসএএ জানিয়েছে, এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন অথবা সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও টেকসই সমাধান খোঁজা হোক। যাতে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে স্বস্তি বিরাজ করে।

ট্যারিফ বৃদ্ধির ব্যাপারে বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ট্যারিফ বাড়ানোর কোনো বিকল্প না থাকায় প্রায় ৪০ বছর পর বিভিন্ন সেবাখাতে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। ১৯৮৬ সালের পর এবার ট্যারিফ বাড়ানো হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলোচনা চলাকালে কর্মসূচির অর্থই হচ্ছে অহেতুক চাপ সৃষ্টি : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা