চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ শতাংশ অর্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পেতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২১ এর চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রী পরিষদের সভায় অনুমোদন পাওয়ার পর চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিটি পূরণ হচ্ছে। বন্দরের তহবিল থেকে ১ শতাংশ সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া হলে চট্টগ্রামের উন্নয়নে গতিসঞ্চার হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত ৬ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২১’ এর প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যেখানে উল্লেখ আছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি নিজস্ব তহবিল থাকবে। তার ১ শতাংশ অর্থ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাবে নগরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত আইনে একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি পরিচালনা প্রশাসক বোর্ড থাকবে। বন্দরের ভাড়া ও টোল আদায়ের বিষয়ে তফসিল তৈরি করে সরকারের কাছে অনুমোদন নিতে হবে। তবে ৫ হাজার টাকার কম হলে অনুমোদন নিতে হবে না। বন্দরের উন্নয়ন সম্প্রসারণেও একটি তহবিল রাখা হয়েছে এ আইনে। উল্লেখ্য, গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরের আয় হয়েছিল ২ হাজার ৪০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২ হাজার ৬৬১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২ হাজার ৮৯২ কোটি ৯৯ লাখ, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরের আয় হয়েছিল ২ হাজার ৯২৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্দরের আয় হয় ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
আমরা জানি, ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের বিশেষ অবদান রয়েছে। অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে সেই অনুপাতে চট্টগ্রামের তেমন উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে হয় না। চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চল দেশের অর্থনীতিতে যেভাবে অবদান রাখছে সে অনুপাতে চট্টগ্রামের আরো বেশি উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, চট্টগ্রামবাসীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি মূল্যায়িত হওয়া দরকার ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি। চট্টগ্রামের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেটিও অক্ষুণ্ন রাখা যায় নি। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলে থাকি। এটি বলার খাতিরে না বলে বাস্তব প্রয়োগ দেখতে চায় চট্টগ্রামবাসী। চট্টগ্রামকে তার যোগ্য মর্যাদা দেওয়া দরকার।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বারবার চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের একটি অংশ চট্টগ্রামের উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশনকে প্রদানের জন্য দাবি করে আসছিলেন। পরবর্তী সময়ে একই দাবি করেছিলেন সাবেক মেয়রগণও। এই আইন পাসের ফলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
আমাদের মনে রাখা দরকার, চট্টগ্রামের অগ্রগতির জন্য বিমান ও রেলওয়ের কানেক্টিভিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যেসব পণ্য অন্যত্র যাচ্ছে তা সরাসরি বন্দর থেকে খুব কম সময়ে চলে যেতে পারবে। কর্ণফুলী মানেই বন্দর; আর বন্দর মানেই বাংলাদেশ। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে কর্ণফুলী ড্রেজিংও অবশ্যই দরকার। কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম তথা বন্দর বাঁচবে না। বন্দরকে বাঁচাতে হলে কর্ণফুলীকে বাঁচাতে হবে। বর্তমানে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের বড় অভিশাপ। অথচ ড্রেজিং করা হলে এই জলাবদ্ধতা থাকবে না। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অর্থাভাবে অনেক প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে পারছে না। নগরের এসব উন্নয়নের জন্য দরকার প্রচুর টাকা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদনের পর প্রত্যাশিত কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এতে চট্টগ্রামের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। ভালোবাসা না থাকলে কোনো কাজই সঠিকভাবে আলোর মুখ দেখবে না। এখন থেকে বন্দর চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের শরিক সংস্থা। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সব দপ্তরকে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। সবাই একসঙ্গে বসে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই চট্টগ্রামের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব হবে। আমরা পরিকল্পিত একটি চট্টগ্রাম চাই। পরিকল্পিতভাবে কাজ করা না হলে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে না।