বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘হ্যাঁ’

আইন মন্ত্রণালয়ে পাশের পর গেজেট গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়বে সেবার দাম

হাসান আকবর | শুক্রবার , ২৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

প্রায় চল্লিশ বছর পর শিপিং সেক্টরের বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ট্যারিফ বাড়ানোর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর এবার প্রস্তাব যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ট্যারিফ বাড়ানোর গেজেট প্রকাশিত হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। বিদেশী একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা করে সেবার মূল্য নির্ধারণ করে রিপোর্ট প্রদান করার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন ট্যারিফ অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রস্তাবে ৫৬টি সেবার বিপরীতে গড়ে ৬০ শতাংশ মূল্য বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, ট্যারিফ গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় একটি জাহাজ পৌঁছার পর থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫৬ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। বহির্নোঙর থেকে জাহাজকে জেটিতে আনার জন্য পাইলট পাঠানো, টাগবোট সার্ভিস, পানি সরবরাহ, ক্রেন চার্জ, জাহাজ ভিড়ানো, কন্টেনার জাহাজ থেকে নামানো কিংবা জাহাজে উঠানো, পণ্য ডেলিভারি উঠানো নামানোসহ পণ্য ডেলিভারি দেয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট হারে মাশুল আদায় করে। এটাকেই বন্দরের ট্যারিফ বা সেবার মূল্য বলা হয়।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে ট্যারিফ আদায় করছে তা ১৯৮৬ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৮ অর্থবছরে ৫টি খাতে ট্যারিফ বাড়ানো হলেও বাকি খাতগুলোর মূল্য আদায় করা হয় ১৯৮৬ সালের হিসেবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় ট্যারিফ বাড়ানোর আলোচনা বা চিন্তাভাবনা করলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০১৩ সালে সেবার মূল্যের পুরো খাতকে পুনঃনির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হলেও মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন জুটেনি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ আবারো প্রস্তাব দাখিল করলে সরকার ট্যারিফ বাড়ানোর অনুমোদন দেয় এবং আন্তর্জাতিক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে ট্যারিফ কাঠামো তৈরির নির্দেশনা প্রদান করে। সরকারের নির্দেশনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ স্পেনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইডিএম কনসাল্টিং ও লোকিকফোরাম’কে ট্যারিফ কাঠামো নির্ধারণের পরামর্শক নিয়োগ করে। ওই প্রতিষ্ঠান নানা বিষয়ে পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন দেশের বন্দরের সেবার মূল্য পর্যালোচনা করে একটি প্রস্তাব দাখিল করে। ২০২০ সালে ওই প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয় বলেও সূত্র জানিয়েছে। বন্দর সূত্র জানিয়েছে যে, নতুন ট্যারিফ কাঠামোর প্রস্তাবনায় ১৮টি খাতে ট্যারিফ বাড়ছে ৬০ শতাংশের বেশি, ১৭টি খাতে ট্যারিফ বাড়ছে ২০ থেকে ৫৯ শতাংশ, ১৯টি খাতে বাড়ছে ২০ শতাংশ। দুটি খাতে ট্যারিফ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন প্রস্তাবনায় প্রতিটি ২০ ফুট কন্টেনার হ্যান্ডলিং চার্জ ১৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৩.১৫ ডলার, ৪০ ফুট কন্টেনার ২২.৫০ ডলার থেকে ৩৪.৮৩ ডলার, জাহাজ পাইলটিং চার্জ ৩৫৭ ডলার থেকে ৭০০ ডলারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সেবারও মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।

নতুন ট্যারিফ কাঠামো নিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রস্তাব পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ওখান থেকে গতকাল প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে। এখন প্রস্তাবটি পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। সেখানে অনুমোদনের পর আরো কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশের পর বাড়তি ট্যারিফ কার্যকর হবে।

অবশ্য ট্যারিফ বাড়ানো অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করে বন্দর ব্যবহারকারীরা এর ঘোরতর বিরোধী করছেন। ইতোমধ্যে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ট্যারিফ বাড়ানোর বিরোধিতা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। এখনো অনেক ধাপ বাকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রায় ৪০ বছর পর ট্যারিফ বাড়ানোর এই উদ্যোগ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারি কর্মচারীরা আন্দোলন করলে বাধ্যতামূলক অবসর
পরবর্তী নিবন্ধদগ্ধ ৫ জনের পরিচয় ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত