‘বন্দর রক্ষায় চট্টগ্রামের শ্রমিক–ছাত্র–পেশাজীবী–নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে গতকাল দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ করে বলেছেন, এই ‘চক্রান্ত রুখতে’ প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক ও কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম। কিন্তু এরপরও বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের এ অঞ্চল ঘিরে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিউমুরিং টার্মিনাল ও লালদিয়ার চর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিনা প্রতিরোধে এ চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকার বন্দর এলাকায় এক মাসের জন্য সভা–সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিনা টেন্ডারে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিং টার্মিনাল তুলে দেওয়ার আয়োজন সম্পন্ন করেছিল। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পরও কেন আওয়ামী লীগের চক্রান্ত বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।
গণমুক্তি ইউনিয়ন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজা মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদ আলম, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক এড শফিউদ্দিন কবির আবিদ, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি ইব্রাহিম খোকন, ডক শ্রমিক দলের সেক্রেটারি আখতারউদ্দিন সেলিম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সেক্রেটারি জাহিদউদ্দিন শাহীন, গণঅধিকার চর্চা কেন্দ্রের মশিউর রহমান খান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার পরিষদের প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সেক্রেটারি জাহেদুন্নবী কনক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নেতা সাইফুর রুদ্র, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল সভাপতি হুমায়ুন কবির, আবদুল্লাহ আল মামুন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর দফতর সম্পাদক লাবণী আকতার। সমাবেশ পরিচারনা করেন গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি সত্যজিৎ বিশ্বাস।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার উপর লাভে আছে। তারপরও বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার আগে তাদের মুনাফা নিশ্চিতের জন্য সরকার বন্দরের ট্যারিফ ৪১% বাড়িয়েছে। অথচ একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার ও ন্যায্যতা নেই। কিন্তু বর্তমান সরকার যেরকম তড়িঘড়ি ও কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে, তাতে সরকার কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে উঠে পড়ে লেগেছে তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে একাধিক বন্দর নেই, দেশের সিংহভাগ আমদানি রপ্তানি যে বন্দর দিয়ে হয়, সে বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে কেউ তুলে দেয় না। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানগত কারণে এর সাথে দেশের সার্বভৌমত্ব–নিরাপত্তার কৌশলগত প্রশ্নও যুক্ত। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের না, বেসরকারিকরণও না, জাতীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করতে হবে বলেও সমাবেশ থেকে দাবি জানানো হয়।
সমাবেশ থেকে বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে না দেওয়ার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার ডাকে আগামীকাল ২৭ অক্টোবর ঢাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও ১ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে শ্রমিক–কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) আহুত অনশন ধর্মঘট কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানানো হয়।










