বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনার জট

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক হলেও কন্টেনারের সংখ্যা বাড়ছে । খালাসের পাশাপাশি প্রতিদিন বিপুল কন্টেনার নামার ফলে এই পরিস্থিতি

হাসান আকবর | সোমবার , ২৯ জুলাই, ২০২৪ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

পুরোদমে কাজ চললেও চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনারজট সৃষ্টি হয়েছে। আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি ফিরে এলেও বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা বাড়ছে। আটকা পড়া কন্টেনার খালাসের পাশাপাশি প্রতিদিন জাহাজ থেকে বিপুল কন্টেনার ইয়ার্ডে নামার ফলে জট পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সক্ষমতার প্রায় পুরোটা ব্যবহার করে কন্টেনার খালাসের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে। তবে জট পরিস্থিতি সামাল নিতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর ফলে কন্টেনার রাখার জায়গার সংকট না হলেও আচমকা এই জট বন্দরের ইকুইপমেন্ট মুভমেন্টসহ অভ্যন্তরীণ নানা কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

দেশের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যের অন্তত ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য জাহাজে করে আনা হয় বন্দরে। এখানে জাহাজ থেকে কন্টেনার নামিয়ে রাখা হয় ইয়ার্ডে। পরে শুল্ক করাদি পরিশোধ করে আমদানিকৃত পণ্য ডেলিভারি নেওয়া হয়। আমদানিকৃত পণ্যের একটি বড় অংশ বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠা বেসরকারি আইসিডিগুলোতে স্থানান্তরিত হয়। বন্দর থেকে নিয়মিত কন্টেনার ডেলিভারি হলেও প্রতিদিন কয়েক হাজার কন্টেনার পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে ইয়ার্ডে রাখা হয়। এতে করে যে পরিমাণ কন্টেনার ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি হয় ঠিক তার সমান সংখ্যক কিংবা বেশি কন্টেনার জাহাজ থেকে নামিয়ে ইয়ার্ডে রাখা হয়। এতে করে স্বাভাবিক ডেলিভারি বন্দরের ইয়ার্র্ডে কন্টেনার কমানোর ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব ফেলে না। উল্টো কোনো কারণে ডেলিভারি বন্ধ হয়ে গেলে ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখার ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে ৩৫ হাজার টিইইউএসের কম কন্টেনার থাকে। ইয়ার্ডে কন্টেনার কম থাকলে কন্টেনার মুভারসহ হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট পরিচালনা করতে সুবিধা হয়। এতে কাজের গতি বাড়ে। ইয়ার্ডে কন্টেনারের জট তৈরি হলে ইকুইপমেন্ট মুভমেন্ট ব্যাহত হয়। এতে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুকে ঘিরে ইন্টারনেট বন্ধ, সাধারণ ছুটি এবং কারফিউ মিলে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য ডেলিভারি পাঁচ দিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তবে এই পাঁচ দিন জাহাজ থেকে আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই কন্টেনার খালাস হয়েছে। যা ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এতে করে ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা বাড়ে। গেল সপ্তাহের শেষ দিকে দুদিন কাজ চলায় কন্টেনারের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছিল। মাঝে শুক্র ও শনিবার পণ্য খালাস কিছুটা কমে যাওয়ায় গতকাল কন্টেনারের সংখ্যা আবার বেড়ে যায়। গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ছিল ৪১ হাজার ১৮৩ টিইইউএস। গতকাল কন্টেনার ডেলিভারি হয়েছে ২ হাজার ৭৪৮ টিইউএস। গত বৃহস্পতিবার ৫ হাজার ১শ টিইইউএস খালাস হয়েছিল। গতকাল তা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা বেড়ে যায় বলে সূত্র জানিয়েছে। গতকাল বন্দরে বার্থিংয়ে থাকা ১১টি জাহাজ থেকে ৫ হাজার ৪৬ টিইইউএস কন্টেনার খালাস হয়েছে।

বন্দর ব্যবসার সাথে জড়িত একটি বিশেষজ্ঞ সূত্র জানিয়েছে, একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম না নিলে স্বাভাবিকভাবে এই জট সামলাতে বেগ পেতে হবে। প্রতিদিন যে পরিমাণ কন্টেনার ডেলিভারি হয়, সেই পরিমাণ কন্টেনার জাহাজ থেকে নামলে ইয়ার্ডের মোট কন্টেনারের সংখ্যার উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। বন্দরের ইয়ার্ড গতিশীল রাখতে হলে কন্টেনারের সংখ্যা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। যা করতে হলে ডেলিভারির পরিমাণ অনেক বাড়াতে হবে।

অপর একটি সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অধিকাংশ কন্টেনার তৈরি পোশাক খাতের। কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্পখাতের আমদানিকারকেরা ইন্টারনেট সেবা বন্ধসহ সাম্প্রতিক ইস্যুতে আটকা পড়া কন্টেনারের চার্জ ইস্যুতে পণ্য ডেলিভারি কমিয়ে দিয়েছে। এই ব্যাপারে গতকাল নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে একটি সিদ্ধান্ত এসেছে। এখন কন্টেনার খালাসের পরিমাণ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল আজাদীকে জানিয়েছেন, বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। বন্দরকে আমদানিরপ্তানি বাণিজ্য বান্ধব করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে আটকে থাকা পোশাক পণ্যের ড্যামারেজ চার্জ মওকুফ
পরবর্তী নিবন্ধশিবির ক্যাডার সরওয়ার ও সহযোগী পাঁচ দিনের রিমান্ডে