বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের দুইটি অয়েল ট্যাংকারে উপর্যুপরি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আগুনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ওয়েল্ডিংসহ বিভিন্ন ধরনের হটওয়ার্কের ব্যাপারে প্রণয়ন করা হয়েছে একটি নীতিমালা। এই নীতিমালা বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) এর কোন ধারা লঙ্ঘন করে কেউ কোন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের নানা দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজে কাজের গতিশীলতা আনার জন্য ও অপারেশনাল কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় জাহাজ মেরামত, রিপেয়ার, জোড়া দেয়াসহ নানা কাজে ওয়েল্ডিং করতে হয়। এই ওয়েল্ডিং বা হটওয়ার্ক বন্দরের অভ্যন্তরে নিয়মিত পরিচালিত হয়। শুধু জাহাজেই নয়, বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় অর্থাৎ জেটি, ইয়ার্ড ও অন্যান্য স্থাপনা বা যন্ত্রপাতিতে হটওয়ার্ক কার্যক্রম চলে। হটওয়ার্কের সময় আগুনের স্ফুলিঙ্ক সৃষ্টি হয়। যাতে অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে অপারেশনাল প্রয়োজনে হটওয়ার্ক সম্পাদনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের দুইটি জাহাজ বাংলার সৌরভ ও বাংলার জ্যোতিতে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। সামগ্রিক দিক পর্যালোচনা করে চট্টগ্রাম বন্দরে অগ্নি দুর্ঘটনা ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে যেকোন হটওয়ার্কের ক্ষেত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা বা এসওপি প্রণয়ন করা হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল এক নির্দেশনা জারি করে বলেছে যে, এখন থেকে যেকোন হটওয়ার্কের ক্ষেত্রে এসওপি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। এই নীতিমালা বা এসওপি’র কোন বিধান লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করা হবে বলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠিতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
২২টি বিষয় নির্দিষ্ট করে দিয়ে প্রণয়ন করা উক্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে যে, বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন বিভাগ বা বিভাগ কর্তৃক নিয়োজিত কোন ঠিকাদার হটওয়ার্ক কাজ সম্পন্ন করতে আগ্রহী হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানের অনুমোদন সাপেক্ষে হটওয়ার্ক কাজ শুরু হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পূর্বে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিতে হবে।
জাহাজে কোন ধরনের হটওয়ার্ক কাজ পরিচালনা করতে হলে (শিপিং এজেন্ট, ক্রু বা ঠিকাদারের মাধ্যমে) কাজ শুরু হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পূর্বে বন্দর চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন কাজ সম্পন্ন করে যে বা যারা হটওয়ার্ক করবেন তারা অনুমোদনের কপি বন্দর কর্তৃপক্ষের ফায়ার শাখায় প্রদান করবেন এছাড়া যেই সময়ে হটওয়ার্ক কাজ আরম্ভ করবে তার কমপক্ষে ২ ঘণ্টা পূর্বে বন্দর ফায়ার সার্ভিস এর মোবাইল নং– ০১৫১৯–১১৪৬৪৬, টেলিফোন– ৪০৬৩, ৬০৬৪ কে অবহিত করতে হবে।
ফায়ার শাখায় কোন হটওয়ার্কের অনুমোদনের কপি আসলে যে স্থানে হটওয়ার্ক সম্পন্ন হবে ঐ এলাকার সংশ্লিষ্ট ফায়ার অফিসার, ফায়ার ব্রিগেড ইন্সপেক্টর সেটি পরিদর্শন করবেন এবং হটওয়ার্ক কাজ শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন ও ফায়ার সদস্য বুকিং নিশ্চিত করবেন।
যে বিভাগ বা বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত ঠিকাদার বা শিপিং এজেন্ট হটওয়ার্ক কাজ করবেন তারা ঐ নির্দিষ্ট এলাকা বা জাহাজের অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ফায়ার সদস্যদের পরামর্শ অনুসারে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। হট ওয়ার্ক শুরু করার আগে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান চবক ফায়ার ফাইটারকে তাদের নিজ দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট স্থানে আনা–নেয়ার ব্যবস্থা করবে। এক সময়ে শুধুমাত্র এক পয়েন্টে হটওয়াক কাজ করতে হবে। একাধিক পয়েন্টে একসাথে হটওয়ার্ক কাজ করতে হলে প্রতি পয়েন্টের জন্য আলাদা আলাদা ফায়ার সদস্য বুকিং করতে হবে অথবা একটি পয়েন্টের কাজ সম্পন্ন হলে আরেকটি পয়েন্টে কাজ সম্পন্ন করবে। হটওয়ার্ক কাজ চলাকালীন সময়ে তেলের পাইপ লাইনে কোন তেল থাকতে পারবে না। জেটিতে কাজ করার সময় তেল জাতীয় পদার্থ ও ময়লা–আবর্জনা যাতে নদীতে পড়ে নদী বা পরিবেশের কোন ক্ষতি করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
নিরাপত্তা বিষয়ে আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রযোজ্য সকল প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে স্থানে বা জাহাজে হটওয়ার্ক কাজ সম্পন্ন হবে তার আশেপাশে কোন ধরনের দাহ্যবস্তু থাকতে পারবে না এবং ধূমপান করা যাবে না। যে কোন হটওয়ার্কের অনুমতির ক্ষেত্রে অনুমতির মেয়াদ সর্বোচ্চ ৭ দিন নির্দিষ্ট থাকবে। অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হলে পুনরায় আবেদন করতে হবে। শুধুমাত্র ফায়ার ফাইটারের উপস্থিতিতে দিনে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত হট ওয়ার্ক কাজ করা যাবে। স্পর্শকাতর এলাকা যেমন (ডিজি কার্গো রাখার স্থান, ফুয়েল রিজার্ভার, গোলাবারুদ বহনকারী জাহাজ) ইত্যাদিতে হটওয়ার্কের ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের সংরক্ষিত এলাকায় যত কম সম্ভব করা যায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। একান্ত করতে হলে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করতে হবে। আরো বেশ কিছু বিষয় নির্দিষ্ট করে দিয়ে গতকাল থেকে এই নীতিমালা কার্যকর করা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নীতিমালা প্রণয়নের কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি খুবই জরুরি। বন্দরের অভ্যন্তরে এবং জাহাজে বিভিন্ন সময় নানা ধরণের হটওয়ার্ক পরিচালিত হয়। এগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তাই কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্কতার জন্যই মূলতঃ নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সকল মহলের সাথে পরামর্শ করেই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও বন্দর সচিব জানিয়েছেন।