আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের আশ্রয়–প্রশ্রয়দাতাদের নাম সংসদে প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী কি–না তা দেখে নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয়দাতাসহ সহায়তাকারী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নামও জাতীয় সংসদে প্রকাশ করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল শনিবার সকালে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনোত্তর দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। উখিয়া–টেকনাফ উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার–৪ আসনে বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে এই আসনে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুর রহমান বদি পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আব্দুর রহমান বদি সংসদ সদস্য থাকাকালীন ইয়াবা কারবার নিয়ে সমালোচিত ও বিতর্কিত হন। ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনেও তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে। এসব প্রতিবেদনে মাদক কারবারিদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল তাতেও বদির নাম ছিল। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের মামলায় সাজা হলে জেলও খাটেন আব্দুর রহমান বদি। পরে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করে জামিন পান। মামলা জটিলতার কারণে একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয়।
নির্বাচনোত্তর ওই সভায় সভাপতির বক্তব্যে আব্দুর রহমান বদি বলেন, যে লোক ইয়াবা কারবার করে অবৈধ টাকার মালিক হয়েছেন তাদের এবার রুখতে হবে। ইয়াবা কারবারিরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন; তারা সরকারের চাইতে শক্তিশালী কি–না এবার দেখে নেওয়া হবে। কারণ উখিয়া–টেকনাফের মানুষ দেশের যেখানেই যায় সেখানে ইয়াবা কারবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অপবাদ দেওয়া হয়। যারা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেন তাদেরকে আপনারা (সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন) সবাই চিনেন।
আইনশৃক্সখলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, আমার কাছে তথ্য রয়েছে টাকার বিনিময়ে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য ইয়াবা কারবারিদের মামলার অভিযোগপত্র থেকে আসামির নাম বাদ দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, চিহ্নিত অনেককে মাদকসহ ধরার পরও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব ইয়াবা কারবারিদের যেন আইনের আওতায় আনা হয়; এ ব্যাপারে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই। এরপরও যদি চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিদের আইনের আওতায় আনা না হয়, তাহলে তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয়দাতাসহ প্রশাসনের সহায়তাকারীদের নামের তালিকা জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রকাশ করা হবে বলেও হুমকি দেন বদি। এ সময় তিনি বলেন, প্রশাসনের যেসব লোক ইয়াবা কারবারিদের কাছ টাকা নেন তারা কি ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন, নাকি তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য আছেন; তা দেখে নিয়ে এবার ফায়সালা হবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারও ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুর রহমান বদির সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার–৪ আসনের নির্বাচন সমন্বয়ক মো. ইউনুছ বাঙ্গালীসহ ইউপি চেয়ারম্যানরা।