চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব কারণে গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধার অভাব, বই সংগ্রহের জটিল ব্যবস্থাপনা, পানির পর্যাপ্ত ফিল্টার না থাকা, প্রয়োজনীয় বই না থাকাসহ নানা কারণে গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে ঢেলে সাজিয়েছেন। গ্রন্থাগারে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। সম্প্রতি শুক্রবার বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি মোতাবেক অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি করায় শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারমুখী হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ যেন বদলে গেল চবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দৃশ্য।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রন্থাগারের প্রতিটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের ভিড়। যা আগে তেমন একটা চোখে পড়তো না। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রতিটি অনুষদভিত্তিক আলাদা আলাদা কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দ মতো বই নিয়ে পড়তে পারেন। গ্রন্থাগারে ঢুকতেই অডিটেরিয়ামের সামনের অংশ শিক্ষার্থীতের পড়ার জন্য ব্যবহার হতো না। সম্প্রতি সেখানেও পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে এখন পড়ার জন্য জায়গা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। এরপর সামনে গেলেই পত্রিকা কক্ষ। সেই কক্ষেও শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন। দ্বিতীয় তলায় কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সমাজবিজ্ঞান, আইন অনুষদের পৃথক পাঠকক্ষ রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রয়োজন মতো বই নিয়ে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনা ছাড়াও গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহের কাজে গ্রন্থাগারে আসেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।
গ্রন্থাগার আগের চেয়ে এখন পড়াশোনায় জমজমাট বলে জানান শিক্ষার্থীরা চবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তারিক হাসান। তিনি বলেন, আগেও গ্রন্থাগারে তেমন একটা যাওয়া হতো না। এখন হলে উঠার পর থেকে লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করছি। যদিও হলে পড়াশোনার যথেষ্ট সুযোগ–সুবিধা আছে তবু লাইব্রেরিতে যাই বিভিন্ন রেফারেন্স বই পড়ার জন্য। লাইব্রেরিতে বসে নোট করা যায়। নৃবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন বলেন, লাইব্রেরিতে আগের চেয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কর্মচারীরাও আগের চেয়ে ভালো আচরণ করেন এখন। প্রশাসনের লোকজনও নিয়মিত লাইব্রেরি ভিজিট করতে যান। এছাড়া হলে মেধার ভিত্তিতে আসন বণ্টন হওয়ায় গ্রন্থাগারে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে ব্যক্তিগত বই নিয়ে লাইব্রেরিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময় গ্রন্থাগারে বই নিয়ে প্রবেশের জন্য দাবি তুলেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এ দাবি নিয়ে প্রশাসন পরামর্শ করে জানাবেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে মাত্র ৩০০ বই সংখ্যা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে দেশি–বিদেশি বই, জার্নালের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখের অধিক। রযেছে সমৃদ্ধ দুষ্প্রাপ্য শাখা। দুষ্প্রাপ্য এবং পাণ্ডুলিপি শাখায় এমন কতগুলো সংগ্রহ আছে যেগুলো প্রাচীন ভূজপত্র, তানপত্র, তুনট কাগজে লেখা। এই শাখায় রয়েছে গবেষকদের গবেষণাকর্মের উপাত্ত হিসেবে চিহ্নিত প্রাচীন পান্ডুলিপি দুর্লভ বই, দলিল। দুষ্প্রাপ্য শাখায় এমন কিছু সংগ্রহ আছে যা বাংলাদেশের অন্য কোনো গ্রন্থাগারের সংগ্রহে নেই। এ শাখায় ১৮৭২ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকাশিত প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুরোনো সাময়িকী রয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের এক ডেপুটি রেজিস্ট্রার আজাদীকে বলেন, এখন গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আগের চেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। এখন শুক্রবারও খোলা থাকছে লাইব্রেরি। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অনেক সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।