পার্বত্য শান্তিচুক্তি পরবর্তী গত দুই দশকে বদলে গেছে পাহাড়ি জনপদ। খাগড়াছড়িতে সড়ক, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সরকার-বেসরকারি বিনিয়োগে কৃষি, শিল্প, পর্যটন ও শিক্ষা খাতেও উন্নয়ন হয়েছে। এক সময়ের পিছিয়ে থাকা পাহাড়ি জনপদ এখন অগ্রসর হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রীতি বজায় থাকলে পাহাড়ে উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। চুক্তির আগে অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটক ছিল না। চুক্তির পর বর্তমানে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যাক পর্যটক ভ্রমণ করে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য এলাকা।
খাগড়াছড়ি পর্যটন কর্পোরেশনে ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল আলম জানান, শান্তিচুক্তির আগে পাহাড়ে কোনো পর্যটকই আসত না। চুক্তি হওয়ার পর পাহাড় শান্ত হওয়ায় বর্তমানে বিপুল দেশি-বিদেশি পর্যটক আসে। পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সহিসংতা কমলে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।
চুক্তির আগে খাগড়াছড়িতে সড়ক অবকাঠমোর তেমন উন্নয়ন হয়নি। চুক্তির পর সড়ক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সড়ক উন্নয়ন হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষি পণ্য সরবরাহ বেড়েছে। এর ফলে বিকশিত হচ্ছে স্থানীয় অর্থনীতি। খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চুক্তির পর সরকারের অর্থায়নে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-বাঘাইহাট সড়ক, বাঘাইহাট-মাচালাং-সাজেক সড়ক উন্নয়ন, দীঘিনালা-ছোটমেরুং, চংড়াছড়ি-লংগদু সড়ক উন্নয়ন, জেলা সড়ক উন্নয়ন, মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়ক উন্নয়ন (১ম পর্যায়) ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইনপ্রুভমেন্ট প্রকল্প, বিভিন্ন সড়কে পিসি গার্ডার সেতু ও আরসিসি সেতু নির্মিত হয়েছে। এছাড়া সড়ক উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খাগড়াছড়ির ৩৯৭ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন হয়েছে। এর ফলে পর্যটন ও কৃষি অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। জেলায় বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে ৪৩টি স্থায়ী সেতু নির্মিত হয়েছ।
চুক্তির পর প্রতিটি পার্বত্য জেলায় স্থাপন করা হয়েছে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎতের গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৫০ শতাংশ। বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ হয়েছে ৮শ কিলোমিটার।
খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার জানান, বর্তমানে অধিকাংশ পাহাড়ি অঞ্চল বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। জেলায় এখন প্রায় ৬৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালির সম্প্রীতি বেড়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান। তিনি বলেন, ৩৩ বিভাগের মধ্যে জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে ২৬টি বিভাগ। চুক্তি অনুযায়ী ভূমি ব্যবস্থাপনা ও পুলিশ বিভাগকে জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করার কথা থাকলেও এখনো করা হয়নি। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে শান্তিচুক্তি উদযাপনে আজ দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।