বদর দিবস : সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার প্রেরণা

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | রবিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

আজ ১৭ রমজান। সারা বিশ্বে এই দিনটি ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় বদর দিবস হিসেবে পালিত হয়। অন্যায় অবিচার শোষণজুলুমের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার আপোসহীন লড়াইয়ের প্রেরণা এই বদর দিবস।

হিজরি দ্বিতীয় সালের ১৭ রমজান (৬২৪ খৃষ্টাব্দের ১৩ মার্চ) সংঘটিত হয়েছিল সত্যঅসত্যের চূড়ান্ত ফয়সালাকারী ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। মুসলমানদের বড় বিজয়ের দিন হিসেবে বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। সত্য সুন্দর সাম্য প্রতিষ্ঠা ও মানবতাকে রক্ষার জন্য মহান আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের (সা.) পক্ষ হতে এ জিহাদ মানবজাতির জন্য বড় ইহসানস্বরূপ। মহানবীর (সা.) মদীনা আগমনের পর ইসলামের পক্ষে সুদৃঢ় জনসমর্থন ও ইসলামের বহুমুখী সফলতা দেখে মুসলমানদের সমূলে উৎখাত ও ধ্বংস করার জন্য দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানে আবু জেহেলের নেতৃত্বে বর্বর কুরাইশ দলপতিরা মদিনা অভিমুখে অভিযান চালায়। মদিনা উপকণ্ঠ হতে ৮০ মাইল দক্ষিণপশ্চিমে বদর নামক স্থানে মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসলামের শত্রুরা। মাত্র ৩১৩ জন নিরস্ত্র মুসলমানের বিপরীতে শত্রুদের সংখ্যা ছিল সহস্রাধিক। এক অসম ও কঠিন যুদ্ধে বীরদর্পে লড়াই করে মহান আল্লাহ্‌র সাহায্যে মুসলমানরা বিজয় ছিনিয়ে আনে। এতে ইসলামের জয়যাত্রার পথ সুগম হয়। একটি প্রতিষ্ঠিত মদিনা রাষ্ট্রের জনগণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসা মক্কার দাম্ভিক ও বিপথগামীদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ মোকাবেলা করতেই মুসলমানরা নিরুপায় হয়ে এতে অংশগ্রহণ করে। পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পরে কুরআনের বিধান চালু করার জন্য রাসুল (সা.) অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে ইকামতে দ্বীনের কাজ করে যাচ্ছিলেন। মক্কী জীবনের ১৩টি বছর বিরুদ্ধবাদীদের নির্মম অত্যাচারের পরেও তিনি থেমে যাননি। অবশেষে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় দীর্ঘতম দুঃখের নিশির অবসান হয় এবং আল্লাহ্‌র নবী তাঁরই নির্দেশে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় যান। সেখানে গঠন করেন সর্বজাতির সহাবস্থানে একটি আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্র। গড়ে তুলেন অসত্য, অন্যায়, শিরক, কুফর ও বাতিলের বিরুদ্ধে এক দুর্ভেদ্য দুর্গ। কিন্তু মক্কার অবিশ্বাসী বিরুদ্ধবাদীদের কাছে এ এক অসহনীয় ব্যাপার হয়ে উঠল। তারা এটা সহ্য করতে পারল না। তারা আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব কায়েমের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল। এ শিশু রাষ্ট্রের মূলেই কুঠারাঘাত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠল। তারা মদিনার সীমান্তে বারবার নাশকতামূলক কার্যকলাপ, লুটতরাজ, সম্পদ বিনষ্ট করে একটি

অস্বস্তিকর ও উত্তেজনাময় অবস্থার সৃষ্টি করতে লাগল। এমনকি তারা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক হীন ষড়যন্ত্র শুরু করে। অতঃপর সিরিয়া থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। রাসুল (সা.) এ খবর পেয়ে মক্কা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণপশ্চিমে সিরিয়ার পথে ‘বদর’ নামক স্থানে ৮ই রমজান সোমবার রাতে সিয়াম পালনকারী তিন শতাধিক মর্দে মুজাহিদকে নিয়ে উপস্থিত হন। এ দিকে চতুর আবু সুফিয়ান মক্কার নবীদ্রোহীদেরকে মিথ্যা খবর রটিয়ে দিলো, তারা মুসলমানদের কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে। তাই আবু জেহেলের নেতৃত্বে মক্কার এক হাজার বিরুদ্ধবাদী সৈন্য রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৭ রমজান ভোর বেলা তারা মুসলমানদের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়। রাসুল (সা.) সিজদায়ে অবনত হয়ে রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ করলেন : ‘হে আল্লাহ! আজ যদি এই মুষ্টিমেয় মুসলিম বাহিনী ধ্বংস হয়ে যায় তা হলে তোমার ইবাদত করার মতো এ পৃথিবীতে আর কেউ থাকবে না।’ আল্লাহ্‌ এ প্রার্থনা কবুল করলেন এবং তিন হাজার ফেরেস্তা দিয়ে সাহায্য করলেন। রোজাদার মুসলিম মুজাহিদদের বীরত্ব ও ত্যাগতিতীক্ষার ফলে ইসলামের বিজয় পতাকা পৃথিবীর আকাশে উড্ডীন হয়েছিল আজকের এই বদর দিবসে মাহে রমজানেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদযাত্রার প্রতিটি ট্রেনে যুক্ত হবে অতিরিক্ত বগি
পরবর্তী নিবন্ধঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরা হল না বাবা-ছেলের