বদরুদ্দীন উমরের চিরবিদায়

| সোমবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন; তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত বদরুদ্দীন উমরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল রোববার সকালে তাকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১০টা ৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম জানান। তিনি বলেন, উনার শারীরিক অবস্থা তো আগে থেকেই খারাপ ছিল। সকালে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১০টা ৫ মিনিটে তাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

শ্বাসকষ্ট ও রক্তচাপের সমস্যার কারণে গত ২২ জুলাই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল বদরুদ্দীন উমরকে। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসাতেও ফিরেছিলেন। কিন্তু এবার আর ফিরলেন না। খবর বিডিনিউজের।

বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

১৯৩১ সালে ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর। তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ। ১৯৫০ সালে উমররা ঢাকায় চলে আসেন। ততদিনে তিনি বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে এসে উমর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক শেষ করে ১৯৫৫ সালে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। অঙফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করেন ফিলোসফি, পলিটিঙ ও ইকোনমিঙে (পিপিই)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ করার আগেই দর্শন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগ দেন। তার হাত দিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়।

ষাটের দশকে প্রকাশিত তার তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) বাঙালি জাতীয়তাবাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন থেকেই পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে তার বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬৮ সালে শিক্ষকতার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী। এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে সভাপতির দায়িত্ব নেন।

শহীদ মিনারে আজ শ্রদ্ধা নিবেদন : সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বদরুদ্দীন উমরের মৃতদেহ আজ শহীদ মিনারে রাখা হবে। সকাল ১০টা থেকে শ্রদ্ধা জানানো যাবে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বদরুদ্দীন উমরের জানাজা হবে। এরপর তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। সেখানে প্রয়াতের মাবাবা ও ফুফুর কবর রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ১০০০ জনের বিরুদ্ধে আরও এক মামলা
পরবর্তী নিবন্ধশেষ দিনে ৪৯ জনের মনোনয়নপত্র জমা