প্রথম ম্যাচে হারের জন্য একাদশ গঠনের দুর্বলতাকেই অনেকে দায়ী করেন। যে কারণে দ্বিতীয় ম্যাচে তিনটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজায় টিম বাংলাদেশ। সেই পরিবর্তনের সুফল পায় তারা। শ্রীলংকাকে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচে ৮৩ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা (১–১) এনেছে টাইগাররা। এই জয়ে সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেল বাংলাদেশ। গতকাল রোববার দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের ১৭৭ রানের জবাবে শ্রীলংকা ৯৪ রানে অল আউট হয়ে যায়। ব্যাটাররা প্রথমে যে দৃঢ়তা দেখান, তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন বোলাররাও। ফলে বাংলাদেশের জয় করায়ত্ত্ব হয়।
গতকাল টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টসে হারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন। টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান লংকান অধিনায়ক। ব্যাটিংয়ের শুরুটা খুব ভাল হয়নি বাংলাদেশের। দলের খাতায় ৭ রান যোগ হতেই ফিরেন দুই ওপেনার। প্রথম ওভারেই পারভেজ হোসেন ইমন ফিরেন ৫ রান করে। দ্বিতীয় ওভারে ফিরেন তানজিদ হাসান তামিম। রানের খাতা খুলতে পারেনি এই ওপেনার। ৭ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর হাল ধরার চেষ্টা করেন লিটন দাশ এবং তাওহিদ হৃদয়। ৬৯ রান যোগ করেন দুজন ২৫ বলে ৩১ রান করা হৃদয়কে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন ফার্নান্ডো। এরপর একই ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকেও ফেরান ফার্নান্ডো। এরপর শামীম হোসেনকে নিয়ে আবারো প্রতিরোধের চেষ্টা লিটন দাশের। ৩৯ বলে ৭৭ রান যোগ করেন এ দুজন। একসময় মনে হচ্ছিল দুইশ পার হবে বাংলাদেশের ইনিংস। কিন্তু দলকে ১৫৫ রানে পৌঁছে দিয়ে ফিরেন লিটন। তবে তার আগে তুলে নেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি। এটি তার টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ সেঞ্চুরি। আর সেটা এসেছে ১৩ ইনিংস পর। চাপের মধ্যে দারুণ খেললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২০২৪ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন লিটন। থিকসানার বলে তুষারার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে লিটন করেন ৫০ বলে ৭৬ রান। যেখানে তিনি একটি চার এবং ৫টি ছক্কা মেরেছেন। এরপর শামীম হোসেন চেষ্টা করেন দলকে টেনে নিয়ে যেতে। কিন্তু নিজের হাফ সেঞ্চুরিটা পূরণ করতে পারলেন না শামীম মাত্র দুই রানের জন্য। ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতে ২৭ বলে ৫টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৪৮ রান করে ফিরেন শামীম। আর তাতে ১৭৭ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
জবাবে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকা শুরুটা ঝড়ের বেগে করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ৫ বলে ৮ রান করা কুশল মেন্ডিস রান আউট হলে ভাঙ্গে উদ্বোধনী জুটি। পরের ওভারে শরীফুলের আঘাত। তার শিকার কুশল পেরেরা। রানের খাতা খুলতে পারেনি পেরেরা। নিজের পরের ওভারে আবার শরীফুলের আঘাত। এবার তার শিকার আভিষ্কা ফার্নান্ডো। নিজের প্রথম ওভারে উইকেট শিকারির তালিকায় নিজেকে শামিল করেন সাইফুদ্দিন। তিনি ফেরান চারিতা আসালাংকাকে। এই চার জনের কেউই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেনি। ৩০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া শ্রীলংকাকে টানার চেষ্টা করেন নিশাংকা এবং সানাকা। ওপেনার পাথুম নিশাংকা যদিও একটু লড়াই করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনিও ৩২ রান করে বিদায় নেন। এছাড়া মিডল অর্ডারে দাসুন সানাকা করেন ২০ রান। দলীয় ৭১ রানে নিশাংকা রিশাদের বলে লিটনের হাতে স্ট্যাম্পড হন। আবার ২ রান পরেই সানাকা মিরাজের বলে তানজিদ হাসানের হাতে ধরা পড়েন। বাকিদের ছেঁটে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। এই দুজন ছাড়া লঙ্কান ব্যাটারদের আর কেউই দুই অংকের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি। ১৫.২ ওভারে ৯৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় লঙ্কানরা। বাংলাদেশের বোলার মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়তে ভূমিকা রাখেন। যদিও বল হাতে সবচেয়ে কার্যকরি ভূমিকা রাখেন রিশাদ হোসেন। তার ৩.২ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেয়া ৩ উইকেটই লঙ্কান ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে দেয়। এছাড়া শরিফুল ও সাইফউদ্দিন নেন ২টি করে উইকেট। মোস্তাফিজ ও মেহেদী হাসান মিরাজ নেন ১টি করে উইকেট। ম্যাচ সেরা হন লিটন দাস। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।