বড় গরুর বিক্রি কম, চাহিদা ছোট ও মাঝারির

ক্রেতার সরব উপস্থিতিতে জমজমাট পশুর হাট

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ৫ জুন, ২০২৫ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমে উঠেছে নগরীর পশুর হাট। গত কয়েকদিন ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পশুর হাটে ক্রেতা সমাগম ছিল কম। এছাড়া যারা গিয়েছেন, তারা মূলত দামের ধারণা নিতেই গিয়েছেন। গতকাল সকালের দিকে কিছু সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও দিনভর আর বৃষ্টি হয়নি। ফলে দুপুরের পর থেকে পশুর হাটে ক্রেতা উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এতে করে পশু ব্যবসায়ীদের মুখেও ফুটেছে হাসি। বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে ক্রেতা ছিল না। সারাদিন গরুর পরিচর্যা করে সময় কাটাতে হয়েছে। চট্টগ্রামের বাজারে বড় গরুর বেচাবিক্রি বেশি হতো। তবে এ বছর বড় গরু তেমন বিক্রি হচ্ছে না। ছোট ও মাঝারি গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বড় গরুতে লোকসান দেয়ার আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের দাবিগরু প্রতিপালনে খরচ বেড়েছে। পশুর হাটে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, আগামী শনিবার কোরবানির ঈদ। সময় বেশি নেই। তবে হাটে প্রচুর গরু। কিন্তু বিক্রেতারা দাম ছাড়ছেন না।

গতকাল বিকেলে নগরীর দুই স্থায়ী পশু বাজার বিবিরহাট ও সাগরিকা’য় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পুরো মাঠ কর্দমাক্ত হয়ে আছে। এতে ক্রেতাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যেই ক্রেতারা পছন্দের গরুটি দরদাম করছেন। এছাড়া পছন্দ হলেই বিক্রেতাকে মূল্য ও হাসিল পরিশোধ করে বাড়ি ফিরছেন। সাগরিকা বাজারে আসা আগ্রাবাদের বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, ঈদের সময় একদম ঘনিয়ে এসেছে। তাই আল্লাহর নাম নিয়ে ৯০ হাজার টাকার দামে গরু কিনলাম। বিক্রেতা দাম হাঁকিয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৯০ হাজার টাকাতেই রাজি হয় বিক্রেতা। নাটোর থেকে আসা পশু বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, কোরবানির বাকি আছে আর দুইদিন। কোরবানির আগের দিন গরু বিক্রি করা কিছুটা ঝুঁকিপূণ। এ বছর আমি বড় ও মাঝারি মিলিয়ে ২০টি গরু এনেছি। এখন পর্যন্ত ৫টি বিক্রি করেছি।

এদিকে বিবিরহাটের কয়েকজন গরু বেপারি হতাশার সুরে বলেন, বিক্রির এ অবস্থা হলে চট্টগ্রামে আসতাম না। গরুর খাদ্য, পরিবহন খরচসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বেড়ে গেছে। এছাড়া এখন যদি গরুর ন্যায্য দাম না পেলে তাহলে অনেক টাকা লোকসান দিতে হবে। অপরদিকে পাবনা থেকে আসা খামারি সেলিম উদ্দিন বলেন, ঋণ করে গরু প্রতিপালন করেছি। লাভের আশায় এতো দূর থেকে চট্টগ্রামে আসাা। আজ (গতকাল) সকাল থেকে ক্রেতা তেমন ছিলো না। তবে দুপুরের পর থেকে দুটি গরু বিক্রি হয়েছে। গরু দুটিতে তিনি ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছেন বলে জানান।

ছোট ভাইকে নিয়ে বিবিরহাট বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের পরিবার ছোট। তাই ছোট গরু কিনতেই আসলাম। তবে বিক্রেতারা যে দাম চাচ্ছেন, শুনে মাথা ঘুরার অবস্থা। সাদাকালো রঙের একটি গরু বিক্রেতা দাম বলছেন, ৮০ হাজার টাকা। অথচ গত বছর এই সাইজের গরুর দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। পর্যাপ্ত গরু সরবরাহ থাকার পরেও যদি এ অবস্থা হয়। সাতকানিয়ার পশু বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, বাজারে ছোট ও মাঝারি গরুর সংখ্যা খুবই কম। তাই দামও একটু বেশি। বড় গরুর চাহিদা তেমন একটা নেই বলে দামও কম।

এদিকে এক কিলোমিটার এলাকার কর্ণফুলী পশুর বাজারে (নূর নগর হাউজিং) ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। পশু বিক্রেতা জামাল আহমেদ বলেন, ক্রেতাই তো নেই, কী গরু বিক্রি করবো। সামনের বছর থেকে গরু পালা ছেড়ে দিতে হবে দেখছি। তিনি আরো বলেন, বাজারে এবার নিজের খামারে পালিত ১২ টি গরুটি এনেছি। এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছি তিনটি। সকাল থেকে যে ক’জন এসেছেন, সবাই দাম হাকাচ্ছেন অনেক কম। তাই বিক্রি করতে পারিনি। একই অবস্থা রয়েছে সল্টগোলা রেলক্রসিং এলাকার পশু বাজারে। বিক্রেতারা বলছেন, প্রত্যাশা মাফিক পশু বেচাবিক্রি হচ্ছে না। অপরদিকে পোস্তাারপাড় ছাগল বাজারে ছাগল বিক্রি বেড়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন সাধারণত ছাগল কিনে কোরবানি দিতে পছন্দ করেন। ছাগল বিক্রেতা মোহাম্মদ জাকির আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে এই কয়েকদিন ক্রেতা ছিল না। আজকে (গতকাল) বেচাবিক্রি বেড়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় নগরীতে এ বছর তিনটি স্থায়ী হাটের সাথে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাটও বসেছে। স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছেসাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। এছাড়া অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহাদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ, ৩৭নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের মুনিরনগর আনন্দ বাজার সংলগ্ন রিং রোডের পাশে খালি জায়গা, ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের গলাচিপাপাড়া বারানিঘাটা রোড সংলগ্ন মাঠ, ৪১ নং ওয়ার্ডের চরপাড়া আলমগীর সাহেবের মাঠ, ৪১ নং ওয়ার্ডের বাটারফ্লাইপার্কের উত্তরে চেয়ারম্যান মাঠ, ২৬নং ওয়ার্ডের বড়পোল এলাকার খালপাড় অস্থায়ী পশুর বাজার, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন খালি মাঠ ও ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের ধুমপাড়া সাগরপাড় লিংক রোডসংলগ্ন রেজাউল আমিন মাঠ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেন ও বাস স্ট্যান্ডে ঘরমুখো মানুষের ভিড়, সড়কে যানজট
পরবর্তী নিবন্ধমির্জাখীল দরবারে ঈদুল আজহা কাল