‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে — উঁকি মারে আকাশে’ কবি গুরুর এই কবিতায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছকে বিশালতায় দাঁড় করালেও এই গাছটি এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। এই গাছটির কাঁচা পাকা ফল মানুষের সুস্বাদু খাবার। পাকা তালের রসে তৈরি করা যায় পিঠাপুলি ও গুড়। যা পুষ্টি ও অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
তালগাছ গ্রামবাংলার রাস্তাঘাটে বর্তমানে তেমন চোখে পড়ে না। এখন মানুষের অবহেলা অবজ্ঞার শিকার গাছটি নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। তালগাছের শূন্যতায় এখন বজ্রপাতে মারা যাচ্ছে মানুষ। সুসংবাদ হচ্ছে হারিয়ে যেতে বসা এই বৃক্ষটির শূন্যতায় ক্ষতিকর প্রভাব বিলম্বে হলে মানুষ উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাল চারা গাছ লাগানোর ছোটখাট কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসাবে রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী নিজ উপজেলায় বেশ কিছু তাল চারা রোপণ করেছেন এবং সকলকে লাগানোর অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।
চিকদাইর ইউনিয়নে তিন হাজার তাল বীজ রোপণের এক উদ্যোগ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন রাউজানের চিকদাইর ইউনিয়নের আশুতোষ দে ও বিউটি দে দম্পতি। তারা এখন নিজ গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় তাল বীজ রোপণ করে অবসর সময় কাটাচ্ছেন। আশুতোষ দে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী বিউটি আনোয়ারা উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তারা দুজনই রাউজান থেকে আসা যাওয়া করে চাকুরি করেন। আগামী প্রজন্মকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে তারা বেশি করে তাল বীজ রোপণ করছেন। আমরা স্বামী স্ত্রী অবসরে ও ছুঁটির দিনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাল বীজ সংগ্রহ করি। ইউনিয়নের বাইরে ৩০/৪০টি বীজ কারো কাছে জমা আছে এমন সংবাদ পেলে নিজেদের টাকায় সেগুলো কিনে নিয়ে গ্রামে রোপণ করছি। এই পর্যন্ত তিন হাজার টাকার বীজ কিনেছি। গ্রামের মহেন্দ্র মাস্টার সড়কসহ কয়েকটি সড়কে বীজ রোপণ করেছি প্রায় তিন’শ বীজ। পরিকল্পনা আছে তিন হাজার বীজ লাগোনোর। আওতায় আনা হবে চিকদাইর-কুণ্ডেশ্বরী সড়কও। এই খাতে নিজেদের বাজেট রয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এই দম্পতি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজেদের প্রয়োজনে তাল-খেজুর বীজ লাগান। জীবনের বিশেষ দিনে এসব গাছের বীজ রোপণ করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনুন, বজ্রপাত থেকে জীবন বাঁচাতে সাহায্য করুন।