দেশের বৃহত্তম পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন চালুর জন্য চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হয় গত বছরের ১ আগস্ট। বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। তিন মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ করে ৩১ অক্টোবর থেকে ফের যান চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে গত বছরের ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে রেল চলাচল শুরু হয়। ইতোমধ্যে এক বছর পেরোলেও এখনো সেতুর উপর যানবাহন চলাচলের উপযোগী সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। সেতুর ওপর যানবাহন চলাচলের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার সময় দেওয়া হলেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। কারিগরি দিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে চলতি মাসের শেষের দিকে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানান রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
গতকাল সরেজমিনে কালুরঘাট সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা হয় বোয়ালখালীর বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম এবং উন্নয়নকর্মী চম্পা রানীর সাথে। কথা প্রসঙ্গে তারা বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজে এক বছর পেরিয়ে গেছে। এখনো সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি। সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের জন্য বারবার রেলওয়ের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে কালুরঘাট সেতু উপর প্রথমবারের মতো ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে পথচারীদের পায়ে হেঁটে পারাপারের সুযোগ করে দেওয়ায় রেলওয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
তারা বলেন, ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত কালুরঘাট সেতুটির বর্তমান বয়স ৯৪ বছর চলছে। সেতু নির্মাণের ৯৪ বছর পর রেল কর্তৃপক্ষ সেতুর উপর দিয়ে পথচারীরা পায়ে হেঁটে পারাপারের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দিয়েছে। গত কোরবানির ঈদে উভয় পারের মানুষের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে খুলে দেওয়া হয়। এখন একদিকে ট্রেনও যাচ্ছে, পাশাপাশি উভয় পাড়ের মানুষ হেঁটে চলাচল করতে পারছে। এটা আমাদের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। এখন যানবাহন চলাচল শুরু হলে ভালো হতো।
কালুরঘাট রেলসেতুর সংস্কার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত। তিনি আজাদীকে বলেন, ব্রিজের উপরে কার্পেটিংয়ের কাজসহ অন্যান্য কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। গাড়ি চলাচলের জন্য সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। মেশিনের (প্ল্যান্টের) সমস্যার কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। এখন বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টি শেষ হলে গাড়ি চলাচলের কাজ যেটুকু বাকি আছে সে কাজগুলো শেষ হবে। এই কাজটুকু শেষ হলে আগামী সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ের প্রকৌশলীরা জানান, প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বুয়েট প্রকৌশলীদের পরামর্শে সংস্কার করা হচ্ছে কালুরঘাট সেতু। সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের পথ থাকায় রেল ট্র্যাকের অভ্যন্তরে পানি জমে রেলপাত ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এ কারণে বছরের বিভিন্ন সময় রেল ট্র্যাক মেরামতের প্রয়োজনে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ রাখা হতো। তবে এবার বিদ্যমান পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ রাখা হয়েছে। এরপর ওই কংক্রিট ঢালাইয়ের উপর পিচ দিয়ে সড়কপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে সড়ক ও রেলপথ উভয়ই আগের চেয়ে শক্ত থাকবে।
বর্ষা মৌসুম কিংবা কুয়াশাজনিত পানি না জমে কংক্রিট ঢালাইয়ের অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ সিস্টেম দিয়ে নদীতে পানি পড়লে রেল ট্র্যাক, ক্লিপ ও সেতুর ইস্পাতের পাটাতন ক্ষয় হবে না। বিশেষ প্রযুক্তি ও বুয়েটের পরামর্শে নতুন করে নির্মাণ করায় মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুটি দীর্ঘ সময় ব্যবহারযোগ্য থাকবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের প্রকৌশলীরা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে সেতুটির সংস্কার কাজ করছে ম্যাক্স।