নগরের চকবাজার কাপাসগোলা রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়কে এলইডি বাতি লাগিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এসব বাতি লাগানোর বছর না পেরুতেই অনেকগুলো বৈদ্যুতিক পোলে মরিচা ধরে গেছে। শর্ত অনুযায়ী ‘জিআই পোল’ না দিয়ে ‘জিআই শিট’ দিয়ে বানানো পোল ব্যবহার করায় মরিচা ধরেছে। বিষয়টি আড়াল করতে মরিচা ধরা পোলে রং করে দেয়া হচ্ছে।
প্রতিটি জিআই পোলে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বিপরীতে জিআই শিটের বানানো পোলে খরচ হবে ১৮ হাজার টাকা। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জিআই শিটের পোল ব্যবহারের অভিযোগ আছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে নীরব ছিল চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
এ অবস্থায় পোল স্থাপনে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গতকাল মঙ্গলবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম। কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন জুয়েল ও মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেমকে কমিটির সদস্য করা হয়। চসিক সূত্রে জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে নগরের ৭৫ কিলোমিটার সড়কে এলইডি বাতি স্থাপনে চারটি প্যাকেজে ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় এইচটিএমএস লি. নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ দেয়া হয়। একই বছরের ৯ জুন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতাভুক্ত সড়ক আছে ৩০টি।
নানা অভিযোগ : শুরু থেকেই প্রকল্পটি নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি জানাজানি হয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভুল তথ্য দিয়ে দরপত্রে অংশ নেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ অপচয় রোধ ও সাশ্রয়ের জন্য প্যানেল এনার্জি সেইভার সড়ক বাতি স্থাপন’ প্রকল্পের কাজের অভিজ্ঞতার সনদ প্রদান করে। এক্ষেত্রে ওই কাজটি শেষ করার কথা বলা হলেও অভিজ্ঞতা সনদ নেয়া পর্যন্ত শেষ হয়নি। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সনদে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখ ছিল। অথচ ২ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় একই বছরের ২ জুন চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের আওতায় যে ক্যাবল লাগানো হয়েছে সেখানেও অনিয়ম করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২৫ মিলিমিটার স্কোয়ার ক্যাবলের পরিবর্তে অনেক জায়গায় ২০ মিলিমিটার ক্যাবল লাগানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মাটির নিচে পোল স্থাপনে যে ফাউন্ডেশন দেয়ার কথা ছিল সেটাও ঠিকভাবে করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে পোল ব্যবহার নিয়েও। সাধারণত জিআই পোলের জোড়াতে জং আসে না। কিন্তু স্থাপিত পোলের অনেকগুলোতে জং এসেছে। সম্প্রতি এই জং আড়াল করতে কাপাসগোলা রোড, বহদ্দারহাট, কালুরঘাট রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়কে রং করে দেয়া হয়।
শর্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্ত রং করার কাজে চসিকের গাড়ি ব্যবহারেরও অভিযোগ আছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখনো কাজ চলমান আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করা পর্যন্ত সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। ওই হিসেবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই স্থাপিত পোলে মরিচা ধরছে এবং চসিকের গাড়ি ব্যবহার করে রং করা হচ্ছে।
এদিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিকের সাধারণ সভায় প্রকল্পটির বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর সিটি মেয়র তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, জাইকার অর্থায়নে এলইডি বাতির পোল স্থাপন নিয়ে সিটি র্কপোরেশনের ১৩তম সাধারণ সভায় অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য মেয়র নির্দেশনা দেন। নগরের বিভিন্ন সড়কে স্থাপিত বৈদ্যুতিক পোল, ক্যাবল ও লাইটের গুণগত মান সঠিক আছে কিনা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দিয়ে কাজ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলা হয় কমিটিকে।
কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম।
চসিকের বিদ্যুৎ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোরশেদ আলম আজাদীকে বলেন, পোল সংক্রান্ত অসঙ্গতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। যেহেতু আমরা এঙপার্ট না, তাই গঠিত কমিটি তদন্ত শেষে যে সুপারিশ করবে সে আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।