বছরে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৩১ কোটি টাকা

ওয়াসার তিন প্রকল্প

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদিত পানির সিস্টেম লসের মাত্রা না কমলেও জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে বিভিন্ন দাতা সংস্থার ঋণের কিস্তি। প্রথম পর্যায়ে আগামী ১ জুলাই থেকে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রথম প্রকল্প এবং গভীর নলকূপসহ তিনটি প্রকল্পের ঋণের জন্য বছরে পরিশোধ করতে হবে ৩১ কোটি টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে শুরু হবে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ দ্বিতীয় প্রকল্প, মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প এবং নগরীতে ৫শ’ কিলোমিটার নতুন পাইপ লাইন প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্প গুলোর ঋণের কিস্তিও। এখন চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। কিন্তু এই উৎপাদিত পানির ২৮ শতাংশই সিস্টেম লসের নামে অপচয় হচ্ছে। বিদেশি ঋণের টাকায় এসব প্রকল্পের উৎপাদিত পানির একটি বড়ো অংশ অপচয় হয়ে যাওয়ায় কারণে দাতা সংস্থার ঋণের কিস্তি পরিশোধের আগামীতে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে হিমশিম খেতে হবে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্যরা।
সেবা সংস্থা গুলোর মধ্যে পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানী সবাই বিলিং সিস্টেমে আধুনিকায়ন প্রযুক্তি নির্ভরে চলে গেছে। প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে বিল আদায় করছে। অথচ চট্টগ্রাম ওয়াসার এতো বিশাল বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করলেও- সিস্টেম লস কমানোর জন্য প্রিপেইড মিটারে যেতে পারেনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অঃ দাঃ) আল মেহেদী শওকত আজম আজাদীকে বলেন, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে তিনটি প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ এবং গভীর নলকূপের দুটি প্রকল্পের কিস্তি শুরু হচ্ছে। এই তিনটি প্রকল্পের জন্য বছরে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ৫৪ হাজার ৯৩০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কর্ণফুলী পানিসরবরাহ প্রকল্প-২ এবং মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় এখনো আসেনি। তিনি জানান, আমাদের (চট্টগ্রাম ওয়াসার) প্রতি মাসে রাজস্ব আয়ের টার্গেট রয়েছে ১৩ থেকে ১৪ কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের রাজস্ব আয় হয় ১২ কোটি টাকার মতো। মাঝে মাঝে কমেও যায়। বছরে ১৩০ কোটি টাকার মতো আয় হয়।
এই ব্যাপারে ওয়াসার বোর্ড সদস্য সাংবাদিক মহসিন কাজী আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম ওয়াসার বার্ষিক যে কর্ম পরিকল্পনা নিয়েছে তাতে সিস্টেম লস ২৩ শতাংশে কমিয়ে আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়াসার বোর্ড সদস্যরা বলেছেন-সিস্টেম লস ২০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার জন্য। চট্টগ্রাম ওয়াসার সিস্টেম লস ৩২ থেকে ২৮ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে-এর নিচে আর নামে না। এতো বিশাল সিস্টেম লসের মাঝেও আগামী জুলাই থেকে দাতা সংস্থার ঋণের কিস্তি শুরু হবে। বছরে ৩১ কোটি টাকার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।
সার্বিক ভাবে প্রযুক্তি নির্ভর না হলে সিস্টেম লস কমবে না। পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানী সবাই বিলিং সিস্টেমে আধুনিকায়ন পদ্ধতিতে চলে গেছে। প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে বিল আদায় করছে। আর চট্টগ্রাম ওয়াসা এখনো পুরনো এনালগ সিস্টেমে রয়ে গেছে। তাতে সিস্টেম লস বাড়ছে। অটোমেশন এবং বিলিং সিস্টেমে আধুনিকায়ন দরকার। তা না হলে কর্ণফুলীর পানি ঘুরে ফিরে কর্ণফুলীতেই চলে যাবে। প্রকল্পের সুফল এবং সেবা পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎপাদন বাড়ছে কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশনে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিলিং সিস্টেমে অটোমেশন করতে হবে তবেই সুফল পাওয়া যাবে-রাজস্ব আয় বাড়ছে। প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। বছরে ২১৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রথম ৫ মাসে যদি লক্ষ্যমাত্র ২৭ শতাংশ অর্জিত হয় তাহলে পুরো বছরে ৬৫ শতাংশের উপরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। এর জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসাকে সার্বিক ভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যুদণ্ডাদেশের নথি যাবে হাইকোর্টে
পরবর্তী নিবন্ধখালেদা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ায় বিএনপি হতাশ : তথ্যমন্ত্রী