গত কয়েক বছর ধরে নানা অব্যবস্থাপনায় শহরের কাছের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পারকি সমুদ্র সৈকত হারাচ্ছিল রূপ জৌলুস। নতুন বছরের প্রথম দিনে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে গতকাল শুক্রবার সৈকত যেন ফিরে পেয়েছিল তার পুরনো রূপ। সকাল থেকে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। সাম্প্রতিক সময় এত অধিক পর্যটকের দেখা মেলেনি বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সৈকত ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, করোনার কারণে ২০২০ সালজুড়ে প্রায় পুরোটা সময় পারকি সৈকতে ছিল খাঁ খাঁ শূন্যতা। শ’খানেকের বেশি পর্যটক হয়েছে এমন দিন হাতেগোণা। ব্যবসায়িক মন্দায় অনেকে এর মধ্যে সৈকত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়েও নিয়েছেন। কিন্তু বছরের প্রথম দিন শুক্রবারটি তাদের কাছে পারকির পুরনো রূপ নিয়ে এসেছে।
গতকাল সকাল বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজারো পর্যটক বাস-ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটর সাইকেল, সিএনজি অটোরিঙা করে এসে পারকি সৈকতে ভিড় করে। এর মধ্যে সৈকতের কাছে নোঙ্গর করা পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর কাজে নিয়োজিত ক্রেন তিয়ান ই দেখা, সেলফি তোলাতে বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। ক্রেনটি নিজ দেশ চীনে ফেরার ছাড়পত্রের জন্য এক মাসের জন্য অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মোহনা আনোয়ারা পারকি সৈকত এলাকায়। গতকাল সূর্যাস্ত আর তিয়ান ই-কে নিয়ে সেলফি তোলার আগ্রহে পারকিতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল পর্যটকের ভিড়। করোনার মধ্যেও পর্যটকদের আতিথেয়তা দিতে ব্যস্তসময় পার করছে লুসাই পার্কসহ বিভিন্ন হোটেল ব্যবসায়ীরা। নিরাপত্তা জোরদারে রয়েছে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। সকাল থেকে ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই দেখতে অনেকে সৈকতে দাঁড়িয়ে আবার অনেকে ছোট নৌকা ও স্পিড বোট নিয়ে কাছাকাছি গিয়েও দেখেছেন।
চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা পর্যটক সাইফুদ্দিন জানায়, মোহাম্মদ পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্রেনটি দেখে খুব ভাল লাগছে। খুব কাছ থেকে দেখলাম, সেই সাথে বিশাল আকৃতির জাহাজ এতো কাছ থেকে কখনো দেখিনি।
সীতাকুণ্ড থেকে বন্ধুদের নিয়ে আসা কলেজ শিক্ষার্থী আফরিন সুলতানা জানায়, জাহাজ আর ক্রেন দেখে ভাল লাগলেও সৈকতজুড়ে কাদার কারণে সাগরের পানিতে নামতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ জানান, নববর্ষকে ঘিরে পারকি সৈকতে পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করছে। পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী জানান, পারকি সৈকতকে আন্তর্জাতিক মানের সৈকতে পরিণত করতে বড় আকারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পারকির উন্নয়নে ৬৩ কোটি টাকার প্রকল্পে পারকিকে আধুনিক পর্যটনে রূপ দিতে কাজ চলছে। শীঘ্রই পারকি আন্তর্জাতিক মানের সৈকত হিসেবে গড়ে উঠবে।