বঙ্গোপসাগরে ঝলমল করছে কুতুবদিয়া

| সোমবার , ৩১ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

পুরো কুতুবদিয়া দ্বীপটি এখন বঙ্গোপসাগরে বিশাল বাতিঘরের মতো জ্বলজ্বল করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করার অঙ্গীকার পূরণের অংশ হিসাবে এই দ্বীপ উপজেলার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপটি জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত হওয়ায় বিদ্যুতের আলো এখন দ্বীপে রাতের অন্ধকার দূর করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রতি এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, এক সময় সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে অন্ধকারে নিমজ্জিত কুতুবদিয়া গত এপ্রিল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে বঙ্গোপসাগরের বুকে যেনো বাতিঘরে পরিণত হয়েছে। দ্বীপের লোকেরা বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে বেশ আনন্দিত। তারা এখন ছোট ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। অনেকে মাছ ও বরফ শিল্পের অনুমোদনের জন্য যোগাযোগ করছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, জীবিকা ও ব্যবসার মতো প্রতিটি খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

কয়েক মাস আগেও গর্ভবতী মায়েদের সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ডিঙিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চকরিয়া বা কঙবাজার যেতে হতো। ইউএনও তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এখন দৃশ্যপট বদলে গেছে। গর্ভবতী মায়েদের আর সাগর পাড়ি দিয়ে দ্বীপের বাইরে যেতে হবে না। দ্বীপের ৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার চালু করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন এখানে সিজারিয়ান অপারেশন করা হচ্ছে। খবর বাসসের।

জানা যায়, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ৩৩ কেভি লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশে ফাইবার অপটিকসহ ৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট সাবমেরিন লাইন নির্মাণ করে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুতের কারণে উপজেলার প্রায় সব এলাকায় ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।

দ্বীপের বাসিন্দা মনির, আজাদ ও জাকিরের মতো কিশোররা জানান, আইসক্রিমের স্বাদ কেমন তা তারা জানতো না। অথচ কুতুবদিয়া দ্বীপে এখন প্রতিদিন ৩ লাখ টাকার আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। বাসিন্দারা জানান, আধুনিক কৃষি, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় এক সময় এই দ্বীপ আর্থসামাজিক উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এখন দ্বীপবাসী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পর ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ২১৫.৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের প্রায় ২ লাখ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দ্বীপে কর্মঘণ্টা বেড়েছে। বাজারগুলো মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকছে। রাত ১১টায়ও লোকজনকে বাজারে গল্পগুজব করতে দেখা যাচ্ছে।

প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালে হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ ১০০ শতাংশ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ পৌঁছে যায়।

উপজেলা সদরের বড়ঘোপ বাজারের ব্যবসায়ী করিম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার কুতুবদিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করেছে। কখনও ভাবিনি কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ আসবে। ১২ এপ্রিল রাত থেকে আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি। বিদ্যুৎ গতিতে আমাদের জীবন বদলে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোটার আনা নিয়ে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরের অনুসারীর মারামারি
পরবর্তী নিবন্ধরাজধানীতে চট্টগ্রামের ২৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার