বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান নিয়ে ভারতের দাবিতে আপত্তি

জাতিসংঘে বাংলাদেশের চিঠি

| রবিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরের কন্টিনেন্টাল শেলফ বা মহীসোপানে ভারতের কিছু দাবির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে গত এপ্রিলে বাংলাদেশের দাবির উপরে আপত্তি জানিয়ে নিজেদের কিছু দাবিসমেত জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ভারতের সেই দাবির উপরে আপত্তি জানানো হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের বরাবর একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ। চিঠিটি জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
গত এপ্রিলে জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিশনে (সিএলসিএস) ভারত দাবি করেছিল, বাংলাদেশ যে মহীসোপান নিজেদের বলে দাবি করছে, তা ভারতের মহীসোপানের অংশ। সে সময় বাংলাদেশ জানিযেছিল, ভারতের ওই আপত্তির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে কমিশনের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার কথা জানায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মহীসোপান নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় ২০০৯ সালে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম জানান, ২০০৯ সালে ভারত তাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য যে ভিত্তিরেখা বা বেইজ পয়েন্ট নির্ধারণ করে, তার মধ্যে দুটি বেইজ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তি ছিল। ২০০৯ সালে তাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের সময় একটি বেইজ পয়েন্ট ছিল বাংলাদেশের জলসীমার ভেতরে। আরেকটি ছিল সাড়ে দশ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রের ভেতরে।
নিয়ম অনুযায়ী সমুদ্রের পানির নিম্নস্তর থেকে বেইজলাইন নির্ধারণ করার কথা থাকলেও দুটি বেইজ পয়েন্ট সেই নিয়ম মেনে অনুমান করা হয়নি বলে মনে করে বাংলাদেশ। সে সময় ভারতের এই বেইজলাইন নির্ধারণে ভুলের বিষয়টি উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এটি সংশোধনের অনুরোধ করা হয়।
২০১১ সালে বাংলাদেশ নিজেদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে তা দাবি করে আবেদন করে জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণ বিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস)। ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ বিষয়ে ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় বাংলাদেশ জয়লাভ করে। আদালত বাংলাদেশকে নিজেদের সংশোধিত সমুদ্রসীমা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সংশোধিত সমুদ্রসীমা জমা দেয়। কিন্তু আদালত সীমানা নিার্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও ভারত এ বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের দাবি করা মহীসোপান নিয়ে আপত্তি জানায় সিএলসিএসে। ওই আপত্তিতে ভারত দাবি করে, বাংলাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে যে বেইজলাইন ধরে নিজেদের মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, তা ভারতের মহীসোপানের অংশ। আদালত যখন সমাধান করে সীমানা নির্ধারণ করে দিল, তখন মহীসোপান নিয়ে ভারতের সাথে আমাদের আর কোনো দ্বন্দ্ব থাকল না। কিন্তু ভারত তারপরও আপত্তি দেয়। এবার চিঠি দিয়ে আমরা জাতিসংঘকে জানাই, ভারতের সাথে আমাদের মহীসোপান নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কাজেই তারা যেন বিষয়টি বিবেচনা না করে। তবে আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভারত আনুষ্ঠানিক কোনো আবেদন করেনি। তাই মহীসোপান সংক্রান্ত তাদের দাবি আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন খুরশিদ আলম।
মহীসোপান কী : সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর সমুদ্রের দিকে পানির নিচে যে ভূখণ্ড ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে নেমে যায়, তাকে বলা হয় মহীসোপান বা কন্টিনেন্টাল শেলফ। ১৯৫৮ সালের কনভেনশন অনুযায়ী, সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর স্থলভাগের বেইজলাইন থেকে লম্বালম্বিভাবে সমুদ্রের ২০০ মাইল পর্যন্ত এলাকার মালিকানা সম্পূর্ণ ওই দেশের। এরপর থেকে দেড়শ মাইল পর্যন্ত সীমার সমুদ্র তলদেশের খনিজ সম্পদের মালিক হবে ওই দেশ। তবে পানিতে থাকা মাছ ধরতে পারে অন্য দেশও। এই পুরো সাড়ে তিনশ মাইলকে ওই দেশের মহীসোপান বলা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাবনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২ কিশোর বন্ধু গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধমালতী রানী দত্ত