বৈশ্বিক যোগাযোগ রক্ষার জন্য বাংলাদেশে খ্রিষ্টীয় সন অনুসরণ করা হলেও বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্য বঙ্গাব্দ বাঙালির জীবনচর্যায় কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। প্রথমে তারিখ-ই-এলাহী’ নামে পরিচিত নতুন বর্ষপঞ্জি ১৫৮৫ সালের ১০ই মার্চ থেকে বঙ্গাব্দ নামে প্রচলিত হয়। বাংলা সন প্রবর্তনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল যথার্থ ও পদ্ধতিগত উপায়ে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা। কেননা চান্দ্র ও সৌরবর্ষে ব্যবধানের কারণে হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী রাজস্ব আদায় ও ফসল সংগ্রহে নানা ধরনের অসুবিধা হতো। এই সমস্যা নিরসনে আকবর বর্ষপঞ্জিকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও কর্মোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে তাঁর সভার বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ শিবাজীকে বর্ষপঞ্জিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দায়িত্ব দেন। শিবাজী চান্দ্র বর্ষ ৯৬৩ হিজরির মুহররম মাসের শুরুতে। সৌরবর্ষ বাংলা ৯৬৩ অব্দের সূচনা করেন। কিন্তু চান্দ্র বর্ষ আর সৌরবর্ষের মধ্যে ১১ দিনের পার্থক্য থাকায় তারিখ-ই-এলাহী প্রবর্তন থেকে ৪৪৫ বছরের মধ্যে ১৪ বছরের পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়।
তবে খ্রিষ্টীয় সনও সৌরবর্ষভিত্তিক হওয়ায় বাংলা সনের সাথে এর পার্থক্য ছিল খুবই কম। এই পার্থক্যও ঘুচে যায় বঙ্গাব্দের আরো আধুনিক সংস্কারের ফলে। ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতি চার বছর পর পর চৈত্র মাস ত্রিশ দিনের পরিবর্তে একত্রিশ দিনে গণনার সুপারিশ করে। ৯৬৩ হিজরিতে বাংলা ৯৬৩ অব্দের সূচনা হয়েছিল। আর সে সময় খ্রিষ্টীয় বর্ষ ছিল ১৫৫৬। অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় বর্ষের সাথে হিজরি বর্ষের পার্থক্য ছিল ৫৯৩ বছর। বর্তমানেও বাংলা সনের সাথে ৫৯৩ বছর যোগ করলে খ্রিষ্টীয় বছর পাওয়া যায়।