বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

ড. সেলিনা আখতার | মঙ্গলবার , ৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবাবি,

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়লক্ষ্মী নারী”।

জাতীয় কবির এই পংক্তিযুগলের উপযুক্ত উদাহরণ নীরবে নিভৃতে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য কাজ করে যাওয়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে নয়, একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে যিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালি মুক্তির সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধরু হিমালয়সম উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে ছায়ার মত ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। এই নামটি বাংলার মানুষের কাছে পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নাম। শৈশব থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর চিন্তাচেতনা, ধ্যানধারণা, বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা, মানসিকতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা; প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গেই ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে ছিলেন। বঙ্গমাতা তাঁর সামগ্রিক জীবনাচরণের মধ্যে ধারণলালনবহন করে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং আদর্শিক যাপিত জীবনকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো বটেই, বঙ্গবন্ধুর পূরো রাজনৈতিক জীবনে অহর্নিশ পার্শ্বে ছিলেন তিনি। ফলে একটি জাতির মনে স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ বপন করে কিশলয় বানিয়ে এর ফলের স্বাদ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনমৃত্যুকে পরোয়া না করে জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটানো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়ে নিজের সব চাওয়াপাওয়াকে বিসর্জন দিয়ে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল হতে ফিরিয়ে অনতে। সংসারের সমস্ত ভাবনা থেকে নির্ভার রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকে যাতে তিনি নিশ্চিন্তে দেশের জন্য কাজ করে যেতে পারেন। তাঁর সহ্যক্ষমতা ছিল অসাধারণ; নিজে বঞ্চিত হয়েও হাসিমুখে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুকে খোকা থেেেক বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছেনে অন্যতম অনুঘটক। বঙ্গমাতা আমাদের স্বাধীনতা ইতিহাসের এক কিংবদন্তি।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। শেখ বংশের নাম তখন ওই অঞ্চলে বেশ পরিচিত। স্বামী শেখ মুজিবুর রহমান তার চাচাতো ভাই ছিলেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পিতামহ শেখ মোহাম্মদ কাশেম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতামহ শেখ আব্দুল হামিদ ছিলেন চাচাতো ভাই। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ডাকনাম ছিল রেণু। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি পিতামাতা উভয়কেই হারান। পিতামাতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি হবুশাশুড়ি এবং বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুনের কাছে সন্তানের মতো বড় হতে থাকেন। পিতামহের ইচ্ছায় ১৯৩৮ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। যদিও তাঁদের সংসারজীবন শুরু হয়েছিল অনেক পরে।

১৯৪৬ সালে অবিভক্ত ভারতের বিহারে দাঙ্গা বাঁধলে জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তরুণ মুজিবকে বিহারে গিয়ে দাঙ্গা থামাতে বলেছিলেন। সে সময় বঙ্গমাতা নিজে অসুস্থ থাকলেও বঙ্গবন্ধুকে দাঙ্গা এলাকায় যেতে বারণ করেননি। ওই সময় বঙ্গবন্ধুকে লেখা বঙ্গমাতার একটি চিঠিতে আমরা দেখতে পাই: তিনি লিখেছেন, “আপনি শুধু আমার স্বামী হবার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্য জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিন্ত মনে সেই কাজে যান। আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আল্লাহর ওপর আমার ভার ছেড়ে দিন।”

বঙ্গমাতার জন্যই আমরা বঙ্গবন্ধুর ’অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটি পেলাম। বঙ্গমাতার অবদান নিয়ে এই বইয়ের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু বলেন, ”আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।” একই পৃষ্ঠার শেষ অংশে বঙ্গবন্ধু সমাপ্ত করেছেন এভাবে: “আমার স্ত্রী যার ডাকনাম রেণু, আমার জন্য কয়েকটা খাতা কিনে জেল গেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরো একদিন জেল গেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।” বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে জীবনের কাহিনী লেখার অনুরোধ, লেখার জন্য ব্যবস্থা এবং কঠিনতম পরিস্থিতিতে লেখা গুলো সংরক্ষণও করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ’অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ‘কারাগারের রোজ নামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এই গ্রন্থগুলি বঙ্গমাতার জন্যই আমরা পেয়েছি। এই গ্রন্থগুলি আমাদের বাঙালি জাতির সম্পদ; আমাদের বেচেঁ থাকার প্রেরণা।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বার বার তুলে এনেছেন তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতন্নেছা মুজিব প্রসঙ্গ। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “আমার জীবনে আমি দেখেছি যে, গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনদিন আমার স্ত্রী বাঁধা দেয় নাই। এমনও দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনদিন মুখ কালা কিংবা আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধহয় জীবনে অনেক বাঁধা আমার আসত। অনেক সময় আমি দেখেছি যে, আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সাও দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের জন্য। আমার সংগ্রামে তাঁর দান যথেষ্ট রয়েছে।” বেগম ফজিলাতুন্নেছা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছেন, “রেণু আমার পাশে না থাকলে এবং আমার সব দুঃখকষ্ট, অভাবঅনটন, বার বার কারাবরণ, ছেলেমেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবন যাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও যুক্ত থাকতে পারতাম না।”

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এর পেছনেও ছিল তার সঠিক দিক নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এক আলোচনায় বঙ্গমাতাকে স্মরণ করে ৭ মার্চের বিষয়ে বলেছেন: “যে কোন সময় যে কোন একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমার মা একটা কাজ করতেন, আব্বাকে কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু থেকে একেবারে আলাদা করে রাখতেন, আইসোলেশনে নিতেন, বলতেন অন্তত ১৫টা মিনিট তুমি এখানে চুপচাপ শুয়ে থাক। সেই সময় আমি আব্বার মাথার কাছে বসা, আস্তে আস্তে আব্বার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, আব্বার শরীরটাও একটু খারাপ ছিল, একটু জ্বরও ছিল। আমার মা মোড়া পেতে বসলেন এবং বসে শুধু একটা কথাই বললেন। আজকে লক্ষ লক্ষ মানুষের হাতে বাঁশের লাঠি, আর পিছনে পাকিস্তানীদের বন্দুক। এই মানুষগুলির কথা তোমাকে ভাবতে হবে আর লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। অনেকে অনেক কথা বলবে, অনেকে অনেক পরামর্শ দিবে। তুমি সারাটা জীবন এ দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছ, এদেশের মানুষ কি চায় এবং কিভাবে তুমি তোমার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে তা তুমিই ভাল জান, তোমার থেকে ভাল কেউ জানে না, কাজেই তোমাকে কারো কথা শোনার দরকার নাই। এই কথাটার উপর মা খুব বেশী জোর দিলেন যে, কারো কথা শোনার দরকার নাই তোমার মনে যে কথাটা আসবে তুমি শধু সেই কথাটা বলবে।” তারপর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে জায়গা করে নিল। তিনি বললেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ভাষণে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা পেয়ে গেল। এর নেপথ্য প্রেরণা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে সারাদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগের দিন ২২ মার্চ রাতে খেতে বসে বঙ্গবন্ধুকে চিন্তাক্লিষ্ট দেখে বেগম মুজিব জানতে চেয়েছিলেন– “পতাকা ওড়ানোর ব্যাপারে কী কোনো সিদ্ধান্ত নিলেন?” বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন– “না, নিতে পারিনি। আমি পতাকা ওড়াতে চাই। একটাই ভয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এখনো ঢাকায়। পাকিস্তানিরা বলবে, আলোচনা চলা অবস্থাতেই শেখ মুজিব নতুন পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এ অজুহাত তুলেই তারা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সামরিক হামলা চালাবে।” এ অবস্থায় বেগম মুজিব পরামর্শ দিয়েছিলেন– “আপনি ছাত্র নেতাদের বলুন আপনার হাতে পতাকা তুলে দিতে। আপনি সেই পতাকা বত্রিশ নম্বরে ওড়ান। কথা উঠলে আপনি বলতে পারবেন, আপনি ছাত্রজনতার দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন।”

বঙ্গবন্ধু আর কোনো কথা না বলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের জানিয়ে দেন, পরদিন ২৩ মার্চ তিনি ৩২ নম্বরে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়াবেন। উপস্থিত নেতাকর্মীরা সেই ঘোষণায় উৎফুল্ল্লচিত্তে জয় বাংলা স্লোগানে চারদিক মুখর করে তোলে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী পরদিন পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে এবং সেই পতাকা ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে হস্তান্তর করে। সেদিন সচিবালয় থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশের সমস্ত সরকারি বেসরকারি অফিস ও বাসাবাড়িতে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেও দিশেহারা হননি তিনি। কঠিন সময়ে দৃঢ়তা বজায় রাখার দারুণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য নিজের দুই বীর সন্তান শেখ কামাল ও শেখ জামালকে মুক্তি যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। যোগাযোগ রেখেছেন মুক্তি সংগ্রামীদের সাথে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাঙালির অহংকার, নারী সমাজের প্রেরণার উৎস।

মাতৃস্নেহে যত্ন করতেন সবাইকে। দেশের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন তিনি। বাঙালির অধিকার আদায় ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে প্রধানমন্ত্রীত্ব বা ক্ষমতার কোন আকর্ষণ ছিল না। বঙ্গমাতাও সেই আদর্শে নিজেকে ও নিজের সন্তানদের গড়ে তোলেন। সহধর্মিণী হিসাবে নয় রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ইতিহাসের কালজয়ী মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণা দায়িনী হয়ে পার্শ্বে ছিলেন। তিনি জীবনভর অন্যের সেবা করে এসেছেন। নারীর উন্নয়নের জন্যে এবং নারীর স্বনির্ভরতা লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। তাঁর সেই সব গুণই ধারণ করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জনদরদী, দেশপ্রেমিক ও সাহসী রাষ্ট্রনেতা, তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। মায়ের মতই জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর হৃদয় নিংড়ানো মমতা, পর্বতসম অবিচলতা আর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে জনগণের সেবা করে যাওয়া তাঁর মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব থেকে পাওয়া। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ জুড়ে বহু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নারীর সামাজিক, রাজনৈতিক, ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটছে। বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। তাঁর নেতেৃত্বে বংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে এমন এক মেয়ের জন্ম দিয়েছন যে মা, বাঙালি জাতির আত্ম পরিচয়ের জন্য, বাঙালির স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন যে মা সেই মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁর অবদান এ মাটিতে চিরদিন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সম্পর্কে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের একটি মন্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। একটি প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন ‘তিনি (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) আমাদের সময়ের খনা, এই সময়ের বেগম রোকেয়া, এই সময়ের চন্দ্রাবতী। তিনি ইতিহাসের মানুষ।’ এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা, মানবিকতা, মমত্ববোধ আর ভালোবাসা দিয়ে ঘটিয়েছিলেন ইতিহাসের এক মহাযজ্ঞ।

আগস্ট মাস বাঙালি জাতির জন্য মহা শোকের মাস। আগস্ট মাসের ৮ তারিখ বঙ্গমাতা জন্মগ্রহণ করেছেন। এই আগস্ট মাসেরই ১৫ তারিখ বঙ্গবন্ধুর সাথে সপরিবারে নর পিশাচদের নির্মম বুলেটের নির্মম আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। সারাজীবন দেশের জন্য অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করা এই মহিয়সী নারী নিজের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দিয়ে এ জাতিকে চিরঋণী করে গেলেন। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর অবদান এর স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলার জনগণ তাঁকে বঙ্গমাতা উপাধিতে ভূষিত করেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতা যেমন আলোকবর্তিকা। তেমনি আমাদের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের জন্য তাঁর অবদান অনন্য, অবিম্মরণীয়। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক : শিক্ষাবিদ; উপাচার্য,

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূগোলের গোল
পরবর্তী নিবন্ধএসোসিয়েশন অব অ্যালায়েন্স ক্লাবস্‌ ইন্টারন্যাশনালের ক্লাবস্‌ ইনস্টলেশন প্রোগ্রাম