বঙ্গবন্ধু মানেই বাঙালির ঠিকানা

রাশেদ রউফ | মঙ্গলবার , ১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

বড় বেদনার মাস এই আগস্ট। আমাদের কাছে শোকের মাস। প্রিয়জন হারানোর মাস। এ মাসেই আমরা হারিয়েছি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর সঙ্গে আমরা হারিয়েছি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে, হারিয়েছি বঙ্গবন্ধুর তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূ এবং তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জনদেরও। সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক বিষয় হলোশিশু রাসেলকেও গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছিল ঘাতকরা। বিদেশে অবস্থান করছিলেন বলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন।

ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম ঘটনা হলো পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড। পুরো পৃথিবী স্তব্ধ। নেমে আসে শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। যাঁকে পাকিস্তানিরা মারতে পারে নি, তাঁকে নিঃশেষ করে দিলো আমার দেশের মানুষ! বিশ্বাসঘাতকের চরম নমুনা স্থাপন করলো বাঙালি পুরো বিশ্বে।

একজন মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করলেই শ্রেষ্ঠ হয়ে যান না। তাঁর কাজই তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দেয়। জনতা তাঁকেই শ্রদ্ধা ও স্মরণে রাখে, যিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জীবনে গভীর রেখাপাত করেছেন। এর পরিণামেই তিনি ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী আসন পান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তেমনই একজন নেতা, যাঁকে মানুষ ভালোবেসে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন। বাঙালি জাতির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তাঁকে বাদ দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্রষ্টা তিনি। তাঁর সংগ্রাম, সৃষ্টিশীলতা, সাহস, ত্যাগ, মহত্ত্ব ও নেতৃত্বই তাঁকে মহান করে তুলেছে, আসীন করেছে অনন্য উচ্চতায়। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই বাঙালির ঠিকানা। ড. এম এ মাননান তাঁর এক লেখায় লিখেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। তিনি নিজেই একটি দেশ, যার নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু, দুটিই অবিচ্ছেদ্য। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতা হিসেবে সুপরিচিত বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনটা ছিল বহু ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ এক বিভীষিকাময় জীবন। বার বার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু পেছনে হটে যাননি কখনো। ষড়যন্ত্র তার পিছু ছাড়েনি, তিনিও ষড়যন্ত্রের শেকল দলিতমথিত করে পথ চলেছেন অটল চিত্তে। হরেক রকমের ষড়যন্ত্রের ঘেরাটোপে থেকেও তিনি নিজ যোগ্যতাতেই হয়ে উঠেছেন জাতির জনক, পরিণত হয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায়। তাঁর অনুভবে ছিল বাংলার স্বাধীনতা, ছিল শোষকদের কবল থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তি। তিনি তো চেয়েছিলেন সবার বাকস্বাধীনতা, অর্থনৈতিক শোষণমুক্তি, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে বাঙালির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, সার্বিকভাবে সকল নাগরিকের কল্যাণময় জীবন। তাঁর এ চাওয়াটুকুই সহ্য হয়নি শাসকদের, তাদের এদেশীয় দোসরদের আর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের চক্রান্তকারীদের। তারা পরিকল্পিতভাবে তার বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু এতো ষড়যন্ত্র করেও পারেনি হিমালয়সম শির উঁচু করা মানুষটিকে নিঃশেষ করে দিতে। তিনি সকল বাঙালির অন্তরে জাগ্রত আছেন। আছেন সাহস, ত্যাগ আর ভালোবাসার প্রতীক হয়ে।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্দোলন দেখে ভয় পাবেন না : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসার্ভার ডাউন, বন্ধ জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম