বঙ্গবন্ধু : বিশ্ব-ইতিহাসের অচ্ছেদ্য অঙ্গ

রাশেদ রউফ | সোমবার , ৫ আগস্ট, ২০২৪ at ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির পরমবন্ধু। শুধু বাঙালি নন, বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী ছিলেন তিনি। বিশ্ব শান্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন ও আদর্শের মূলমন্ত্র। বঙ্গবন্ধু সর্বদা বিশ্বের নিপীড়িত, অবদমিত, শোষিত ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি অপরিহার্য। বঙ্গবন্ধু তাঁর শান্তিবাদী দর্শনের জন্য উত্তরঔপনিবেশিক বিশ্বে অনুপ্রেরণার এক উৎস হয়ে আছেন। বিশ্বশান্তির অগ্রদূত এবং নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি বিশ্বজুড়ে নন্দিত পুরুষ। তিনি কেবল বাঙালির জন্য ভাবেননি, ভেবেছেন বিশ্ববাসীর জন্যও। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনৈতিক এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, ‘বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন বিশ্বমানবতা এবং অবিচল মানবধর্মের অগ্রগণ্য স্রষ্টা। বঙ্গবন্ধুর মানস বিশ্লেষণে এটিই দীপ্যমান উদ্ভাসিত যে, তিনি সকল ধর্মবর্ণদলমতের উর্ধ্বে এক কালজয়ী মহামানব।’

নাইজেরিয়ার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুলরাশিদ নাল্লাহ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শুধু তাঁর দেশের স্বাধীনতার জন্যই সংগ্রাম করেননি, তিনি বিশ্বমানবতার জন্যও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আফ্রিকাসহ বর্তমান বিশ্বে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজও প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, “তিনি শুধু বাংলার বন্ধু ছিলেন না, তাঁর ভূমিকা ছিল আরও অনেক বড়, এবং অতুলনীয়। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মহান রাজনৈতিক নায়ক, বাংলার সবচেয়ে সমাদৃত মানুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার। বাংলাদেশের জনজীবনে তাঁর প্রভাব আজও বিপুল। তাঁকে ‘বাংলাদেশের জনক’ বা বঙ্গবন্ধু বলাটা নিতান্তই কম বলা। তিনি যে এর চেয়ে বড় কোনও অভিধা চাননি, সেটা তাঁর সম্পর্কে আমাদের একটা সত্য জানায়, তিনি নাম কিনতে চাননি, মানুষ তাঁকে অন্তর থেকে ভালবাসত।রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার না করার যে নীতিতে বঙ্গবন্ধু জোর দিয়েছিলেন, এই প্রসঙ্গে তা অতি গুরুত্বপূর্ণ, শুধু বাংলা নয়, গোটা বিশ্বের পক্ষেই। বঙ্গবন্ধুকে তাই ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসেবেও আমরা সম্মান জানাতে পারি।”

আবুল ফজলের ভাষায়, ‘বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উচ্চারিত নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনি শুধু নির্মাতা নন, তাঁর প্রধান নায়কও। ঘটনাপ্রবাহ ও নিয়তি তাঁকে বার বার এ নায়কের আসনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বলা যায়, যেন হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও তাঁর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। ইতিহাস দেয় না তেমন কিছু করতে। ইতিহাস নিজের অঙ্গ নিজে করে না ছেদন। শেখ মুজিব ইতিহাসের তেমন এক অচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাংলাদেশের শুধু নয়, বিশ্বইতিহাসেরও’।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনির্দিষ্টকালের কারফিউ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষ আহত দুই শতাধিক