৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসন, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক।
গতকাল সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি অফিসের ঊর্ধ্বতনরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে তোলা হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও পুলিশ সুপার এস এম শফিউল ইসলাম ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে টাইগারপাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় কাউন্সিলর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে জাতির পিতাসহ সকল শহিদের স্মরণে সকাল থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন শেষে বড়পোল চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় এবং কালো ব্যাচ ধারণের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা হয়। সকাল ১০টায় কাজির দেউড়ির আইসিসি কনভেনশন হলে খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল শেষে আলোচনা সভা হয়। সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ থেকে শোক র্যালি বের করা হয়। এরপর শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না। বাংলাদেশের সৃষ্টি না হলে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পেতাম না। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক। তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম নির্মম হত্যাকাণ্ডের আর নজির নেই। ১৯৭৫ সালের এই দিনে যে সকল কুলাঙ্গার ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা যাবে, সেটা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেসব স্বঘোষিত খুনিকে বিচারের আওতায় এনেছেন। অন্যান্য যারা এখনও পলাতক আছেন তাদেরকেও বাংলার মাটিতে এনে বিচার করা হবে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরেআলম মিনা, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ প্রমুখ।
একঝাঁক কচিকাঁচার দল। তারা কেউ একাত্তর দেখেনি, দেখেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তবুও রং পেন্সিল নিয়ে আঁকতে বসে যায়। তাদের ছবিতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব। কেউ এঁকেছে ৭ মার্চের ভাষণ দানরত সেই ছবি। কেউ বেছে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, কেউবা ভাষা আন্দোলন। এরপর ছিল আবৃত্তি প্রতিযোগিতা।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দামপাড়ায় মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সের মাল্টিপারপাস শেডে এই আয়োজন করেছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। এতে প্রধান অতিথি পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, উপ–পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার, সচিব অধ্যাপক রেজাউল করিম ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র, আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোসহ চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতির পিতাকে স্মরণ করেছে।