করোনাকালে থমকে যাওয়া বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। বছরে অন্তত এক কোটি গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে এই টানেল। টানেলের দুটি সুড়ঙ্গের একটির ভেতরে গাড়ি চলাচলের জন্য পিচঢালা রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। একই সাথে দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ তৈরির কাজও চলছে পুরোদমে। ইতোমধ্যে টানেলের ৬৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আগামী বছরের শেষ নাগাদ বহুল প্রত্যাশার এই টানেলের ভিতর দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হতে পারে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কর্ণফুলীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের কার্যক্রম করোনাকালে কিছুটা থমকে গিয়েছিল। চীনে করোনার প্রকোপ দেখা দেয়ার পর থেকে হোঁচট খেয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কার্যক্রম। চীনে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন টানেল নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ অনেকে। চীনের যে কারখানায় সেগমেন্ট তৈরি হচ্ছিল সেটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। টানেলের শক্ত দেয়াল হিসেবে ২০ হাজারের বেশি সেগমেন্ট স্থাপন করা হবে দুটি টিউবে। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জিংজিয়ান শহরে টানেলের সেগমেন্টগুলো তৈরি হচ্ছে। ওখান থেকে সেগমেন্ট জাহাজে করে এনে তলদেশে স্থাপন করে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ৮টি সেগমেন্টে দুই মিটারের একটি রিং তৈরি করে। এভাবে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ মিটার করে টানেল নির্মাণের কাজ চলে। চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণ করতে গিয়ে সেগমেন্টের জন্য সংকটে পড়ে। বর্তমানে টানেল নির্মাণের কাজে গতি এসেছে। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। চীন থেকে সেগমেন্টসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র আনার স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি সেগমেন্ট স্থাপন করে প্রথম সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ বলেন, টানেল নির্মাণের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। প্রথম টিউবে দুই লেনের একটি রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। দ্বিতীয় টিউবেও ৯শ ফুটের বেশি সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ তৈরির কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। প্রকল্পের কাজ ৬৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী বছরের শেষ দিকে যাতে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করে সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এই টানেল দিয়ে প্রথম বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে। কয়েক বছরের মধ্যে গাড়ি চলাচলের পরিমাণ ১ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছবে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর যৌথভাবে টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনা রাষ্ট্রপতি শিং জিনপিং। ২০২২ সালের মধ্যে টানেল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। করোনাকালে হোঁচট খেলেও এখন নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মূল টানেলের সাথে উভয় প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে। নদীর তলদেশে এর গভীরতা হবে ১৮ থেকে ৩১ মিটার। চার লেনের টানেলে দুটি টিউব থাকবে। টানেলের ভিতরে দুটি টিউবে ওয়ানওয়ে গাড়ি চলবে। একটি দিয়ে শহর থেকে আনোয়ারামুখী গাড়ি যাবে, অপরটি দিয়ে আনোয়ারা থেকে শহরমুখী গাড়ি আসবে। একটি টিউব ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট চওড়া এবং উচ্চতায় হবে ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট।
টানেল দিয়ে বছরে এক কোটি চল্লিশ লাখ গাড়ি চলাচলের সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, এসব গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ কন্টেনারবাহী ট্রেইলর, বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে ১৩ লাখ বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস। ১২ লাখ কার, জিপ ও বিভিন্ন ধরনের ছোট গাড়ি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই বিপুল সংখ্যক গাড়ির চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সর্বোচ্চ মান বজায় করে টানেল নির্মাণ সম্পন্ন করার প্রচেষ্টা চলছে।