জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন-অগ্রগতির আকাশচুম্বী অর্জন বিশ্বস্বীকৃত। দেশীয়-আন্তর্জাতিক সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও অন্ধকারের অশুভ শক্তির অপচেষ্টাকে নস্যাৎ করে অদম্য প্রজ্ঞা-মেধা-দেশপ্রেম ও সাহসিকতায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ব্রতে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন। দারিদ্র বিমোচন-তরুণদের কর্মসংস্থান-যোগাযোগ-শিল্পায়ন-নগরায়ণ-ভৌত অবকাঠামো-অর্থনৈতিক অঞ্চল-সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের সাফল্য গাথায় যুগান্তকারী মাইলফলক হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বিস্ময়কর উপমা হচ্ছে সমুদ্র বিজয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, চলমান মেট্রোরেল প্রকল্প এবং অতিসম্প্রতি করোনাজয়ে বিশ্বে পঞ্চম ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থানে অধিষ্ঠ হওয়া ইত্যাদি। মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামকে ঘিরে যে স্বপ্নের সংযোগ স্থাপন করেছেন; স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অত্যন্ত বিশ্বস্ত অনুসারী প্রয়াত জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরী, এম.এ আজিজসহ বর্ষীয়ান নেতাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন চট্টগ্রামের কিংবদন্তী নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ প্রমুখ।
বস্তুতপক্ষে চট্টগ্রামের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনালগ্নে আখতারুজ্জামান চৌধুরীর একনিষ্ঠ কর্মকাণ্ড এবং নির্ভীক অংশগ্রহণে তিনি বহুলাংশে স্বতন্ত্র চরিত্রের রাজনীতিক হিসেবে চিত্রিত। মহান স্বাধীনতার মাস ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এম.আর.সিদ্দিক, জহুর আহম্মদ চৌধুরী, এম.এ. হান্নান, এম.এ. মান্নান ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে নিয়ে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যা থেকেই চট্টগ্রামের শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এম.আর. সিদ্দিকীর টাইগার পাসের বাসায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পাকিস্তানিদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা করছিলেন। রাত ১.০০টার দিকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে জননেতা জহুর আহম্মদ চৌধুরী বরাবরে ওয়ার্লেস বার্তার মাধ্যমে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তাটি পৌঁছুনোর পর পরই ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রামকে চারটি সেক্টরে ভাগ করে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামের শহর এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয় মরহুম জহুর আহম্মদ চৌধুরী, এম.এ মান্নান ও আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে। স্বল্প পরিসরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠন-১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বর্বরতম হত্যাযজ্ঞে প্রায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বরণ এবং পরবর্তী সময়ে দলকে সুসংগঠিত করার নানামুখী কর্মকান্ডে বাবু ভাইয়ের ভূমিকার বিশদ বিশ্লেষণ দুরূহ ব্যাপার। ১৯৭৮ সাল থেকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদান ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং ২০১১ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের উচুমার্গে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে শিল্প বাণিজ্যের অগ্রগতিতে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
এটি সর্বজনবিদিত যে সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ঐতিহ্যের দিক থেকে অতি প্রাচীনকাল থেকেই চট্টগ্রামের ইতিহাস নৈপুণ্য, বৈচিত্র্য ও সংগ্রামী চেতনায় সমৃদ্ধ। সমুদ্র বন্দরের কারণে চট্টগ্রাম ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকেও বৈশ্বিক পরিমন্ডলে ছিল সুপ্রসিদ্ধ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে চট্টগ্রামের অবদান স্বকীয় সত্তায় ভাস্বর। স্বর্গীয়/প্রয়াত যাত্রামোহন সেন, শেখ-এ চাটগাম কাজেম আলী, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, মাষ্টারদা সূর্য সেন, লোকনাথ বল, আবদুল হক দোভাষ, রফি উদ্দিন সিদ্দিকী, সিরাজুল হক, ডা. এম.এ. হাশেম, খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী, ব্যারিষ্টার আনোয়ারুল আজিম, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত ও পূর্ণেন্দু দস্তিদার, বাদশা মিয়া চৌধুরীসহ অনেকেই চট্টগ্রামের নন্দিত ইতিহাস সৃজনে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। চট্টগ্রাম শুধু বাংলাদেশ নয় ভারতবর্ষকেও মুক্তি সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মহিমান্বিত অধ্যায় রচনায় পথপ্রদর্শক। সম্ভবত এজন্যই বহুকাল পূর্বে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বলেছেন ‘চট্টগ্রাম সর্বাগ্রে’।
আমদানি-রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অর্জনে বর্তমান সরকারের গৃহীত মেঘা প্রকল্পের মধ্যে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে; পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), গভীর সমুদ্র বন্দর, পতেঙ্গা-হালিশহর উপকূলে বে-টার্মিনাল নির্মাণ ইত্যাদি। দেশের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ চলমান মেঘা প্রকল্প সমূহের অন্যতম। দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাঁশখালী ও মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের যানজট নিরসনে নেওয়া হয়েছে ফ্লাইওভার, আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো প্রকল্প। সমকালীন চট্টগ্রাম মহানগর-উত্তর-দক্ষিণ জেলায় বিভক্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কর্ণফুলীর ওপারে বিশেষ করে অনোয়ারা কেন্দ্রিক দক্ষিণ চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র পরিকল্পনা ছিল সুবিস্তৃত। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার-ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথেও যোগাযোগ কাঠামো তৈরিতে বাবু ভাইয়ের চিন্তা-চেতনার প্রায়োগিক বাস্তবায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার অবারিত উন্নয়ন দর্শন প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই উন্মুক্ত হচ্ছে।
বিশ্ববাসীসহ দেশের আপামর জনগণ সম্যক অবগত আছেন ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম ও দীর্ঘতম এই টানেল নির্মাণের সূচনা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও চীনের মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শহরকে বাইপাস করে সরাসরি কক্সবাজারের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরে যানজট কমে আসবে। চীনের সাংহাইয়ের আদলে নদীর দুই তীরকে একই বন্ধনে আবদ্ধ করবে দৃষ্টিনন্দন এই টানেল। উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের পূর্বে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে নির্বাচনী সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে এই টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং টিউবগুলোর দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের ওভারব্রিজ। ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল দিয়ে কর্তফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থল পথ দিয়ে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যান চলাচলের সুযোগ থাকবে। নগরীর আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম শহর-বন্দর ও বিমানবন্দরের সাথে উন্নত-সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ কমবে এবং পূর্ব প্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল পরিবহন প্রক্রিয়া সহজতর হবে। কর্ণফুলী টানেল শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না; দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-বান্দরবানসহ পাহাড়, সমুদ্র ও নদীর ত্রিমাত্রিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
৭ জানুয়ারি ২০২২ আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি ও চতুর্থ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলকের বছর। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দশের প্রথম টানেল।’
প্রাসঙ্গিকতায় বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী দেশের অন্যতম এ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। টানেলের উভয় প্রান্তের অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮৫ শতাংশেরও বেশি। টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে চলছে ওজন স্কেল, টোলবক্স স্থাপনের কাজ। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ড্রেন ও স্লোপ প্রটেকশনের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে সমানতালে। প্রথম টিউবে লেন স্ল্যাবের কাজ শেষ হওয়ার পর চলছে রোড সারফেজ তৈরির কাজ। এছাড়াও দ্বিতীয় টিউবে লেন স্ল্যাব সম্পন্ন হয়েছে ৮০ শতাংশ। টানেলের অভ্যন্তরের কমিউনিকেশন সিস্টেম, ভেন্টিলেশন এবং অন্যান্য কাজের জন্য সরঞ্জাম চীন থেকে শিগগিরই আনা হচ্ছে দেশে।’ সমীক্ষা অনুসারে টানেল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার গাড়ি চলাচল করবে। প্রতি বছর ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে যান চলাচল। এ হিসাবে ২০৩০ সালে চলাচল করবে ৩৮ হাজার। ২০৪০ সালে তা বেড়ে হবে ৬২ হাজার এবং ২০৬০ সালে দৈনিক গড়ে যান চলাচল করবে ১ লাখ ৩০ হাজার।
চট্টগ্রাম-দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের ইতিবাচক-গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপনের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্প কারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব এবং প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়নসহ গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ অবশ্যই ত্বরান্বিত হবে। টানেলকে ঘিরে বিকশিত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিন-পার্বত্য অঞ্চলের সমুদয় পর্যটনশিল্প। ফলশ্রুতিতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি-দারিদ্র্য দূরীকরণসহ নানাবিধ কর্মকান্ডের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের অর্থনীতির আকার এবং জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এলাকাবাসীর ভাষ্য মতে বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে গেলে তাদের এলাকা নবতর রূপান্তরে অত্যুজ্জ্বল হবে। ইতোমধ্যে তারা এলাকার রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ, কোরিয়ান-চীনা ইপিজেড তৈরির মতো কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনের কার্যকারিতা অবলোকন করছেন। অনেক শিল্পপতি-ব্যবসায়ী উদ্ভাবনী ব্যবসা-শিল্প কারখানা স্থাপনের নিবিড় আকর্ষণে বিপুল পরিমাণ জায়গা-জমি বেচা-কেনা শুরু হওয়ায় এলাকায় জমির দামও উর্ধ্বমুখী। উজ্জ্বল এক সমৃদ্ধ দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা পুরো দেশ-দেশবাসীকে সকল দিক থেকে উপকৃত করার প্রাণস্পন্দনে অচিরেই এই বঙ্গবন্ধু টানেল অনবদ্য অধ্যায় রচনা করবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু-বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁদের অন্তরের গভীরে লালিত অনুসারী চট্টগ্রামের প্রাণপ্রিয় হিংসপুরুষ আখতারুজ্জামান বাবুর প্রতি চট্টগ্রামবাসীর অপরিমেয় কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার পতাকা চিরকাল উড্ডীন থাকবেই- নিঃসন্দেহে-দৃঢ়চিত্তে তা দাবি করা মোটেও অযৌক্তিক বা অমূলক নয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়