বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের অধীর অপেক্ষা, খুলে যাবে নতুন দ্বার

| মঙ্গলবার , ৫ জুলাই, ২০২২ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী ডিসেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন দেশের ১৭ কোটি মানুষের মর্যাদার প্রতীক কর্ণফুলীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল। গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর জনসাধারণের প্রবল আকাঙ্ক্ষা এখন বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন নিয়ে। গত ২ জুলাই আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বলেন, গত মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। এখন টানেলের ভেতরে ইন্টারনাল স্ট্রাকচারের কাজ চলছে। টানেলের দুটি টিউবের খনন কাজ আগেই শেষ হয়েছে। দুই টিউবের ক্রস প্যাসেজের কাজ চলছে। উচ্চমাত্রার ঝড়জলোচ্ছ্বাসের কথা চিন্তা করেই টানেলের ডিজাইন করা হয়েছে। টানেলের মুখে ফ্লাডগেটসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ডিজাইন অনুযায়ী। সুতরাং জলোচ্ছ্বাস হলেও টানেলের কোন ক্ষতি সাধন হবে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের অবশিষ্ট ১৪ শতাংশ কাজ শেষ হলেই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আরেক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘুরে যাবে দ্রুত বেগে। বাড়বে জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান। কর্ণফুলী নদীর আনোয়ারা অংশে অর্থাৎ দক্ষিণ চট্টগ্রামে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে আসবে বিদেশি বিনিয়োগ।

এদিকে কর্ণফুলীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল, পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের সাথে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। চীনের সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রাম শহর ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে রূপ পাবে। কর্ণফুলীর দক্ষিণ ও পূর্ব তীরবর্তী পশ্চিম পটিয়া ও আনোয়ারা পরিণত হবে উপশহরে। কর্ণফুলীর অপর প্রান্তে সিইউএফএল এলাকায় টানেলের মুখ থেকে শুরু হয়ে কালাবিবিরদীঘি পর্যন্ত গিয়ে পিএবি সড়কের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে টানেল রোড। অন্যদিকে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে সাড়ে ১১ কিলোমিটার ছয় লেনের সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। এটিও কালাবিবিরদীঘি পর্যন্ত গিয়ে যুক্ত হবে টানেল রোডের সঙ্গে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই টানেল হবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চ্যানেল। বাড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার। খুলে যাবে পর্যটনশিল্পের নতুন দুয়ার। আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু টানেল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। চট্টগ্রাম ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে এই টানেল এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। তাঁরা বলেন, সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময়। ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’এর কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে যা অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পার থেকে কঙবাজার পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। পর্যটননগরী কঙবাজারের সঙ্গে সারা দেশের সংযোগ আরও গতিশীল করতেও কাজে আসবে টানেলটি। চট্টগ্রামের সিটি আউটার রিং রোড হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে সরাসরি টানেলে প্রবেশ করা যাবে। এতে চট্টগ্রাম শহরের যানজট থেকেও মুক্তি মিলবে।

এই টানেল দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা সারা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, ‘কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে পূর্ব প্রান্তের যোগাযোগ ও আমদানিরপ্তানি পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে উঠবে; বিশেষ করে আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেড, বাস্তবায়নাধীন চায়না ইকোনমিক জোন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, পর্যটননগরী কঙবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।’

মোট কথা, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মতো আরও একটি স্বপ্নের কর্মযজ্ঞ হলো বঙ্গবন্ধু টানেল। এই স্বপ্নও এখন প্রায় হাতের মঠোয়। এই বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র দেশের অর্থনীতিতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধচেক জাতীয় দিবস, রোয়ান্ডার স্বাধীনতা দিবস, ভেনেজুয়েলার জাতীয় দিবস ও আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস