বঙ্গবন্ধু টানেলের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি

পরিদর্শনকালে মুখ্য সচিব ।। পার হতে সময় লাগবে সাড়ে ৩ মিনিট ।। ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ের ইমার্জেন্সি মুডে ট্রায়াল করব : প্রকল্প পরিচালক

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বর্তমান সরকারের একটি সিগনেচার প্রজেক্ট। এই টানেল পুরো এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই টানেলটি নির্মাণে প্রকৌশলীরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এই টানেল সারাদেশের গর্বের প্রতীক। বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারদের অসাধারণ কর্মনৈপুণ্য ও স্থাপত্যশৈলী আমাদেরকে উপহার দিতে যাচ্ছে। এটা আমাদের বিশাল সাফল্য, এটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। আগামী ২৮ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করবেন এবং আনোয়ারা অংশে জনসভা করবেন। এই টানেলটি শুধু দুই প্রান্তের সংযোগ করবে না, টানেলটি ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্টে নির্মিত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হওয়া। কক্সবাজারের সাথেও যোগাযোগ সহজ হবে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় তিনি টানেল পরিদর্শনে উদ্বোধনের প্রস্তুতির সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার পর তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে টানেল পরিদর্শনে যান।

মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, টানেলের কারণে পুরো এলাকাটিতে অবকাঠামোগতসহ নানারকম উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। এটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই। আগামী ২৮ অক্টোবর ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে আমরা টানেলের উদ্বোধন করতে চাই। আমরা সারাদেশের মানুষ এই টানেলকে নিয়ে গর্ব করতে পারি। মাত্র ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটি তিন থেকে সাড়ে ৩ মিনিট সময়ের মধ্যে পার হয়ে যেতে পারবে।

তিনি বলেন, টানেলের দুই প্রান্তের পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ ফায়ার স্টেশন নির্মাণ কাজ চলছে। নিরাপত্তার সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া আছে। টানেলের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দুই প্রান্তের থানা পুলিশের পাশাপাশি টুরিস্ট পুলিশ থাকবে। কোস্টগার্ডও নিরাপত্তার বিধান করবে। সবমিলিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। নিরাপত্তার স্বার্থে যখন যা প্রয়োজন হয়েছে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ মিটার থেকে ৩১ মিটার নিচ দিয়ে এ টানেল গেছে। কঙবাজারের সঙ্গে যোগাযোগও সহজ হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান ইউসুফ হারুন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ তোফায়েল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার একেএম শফিউল্লাহ, বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ।

এর আগে বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, টানেল ব্যবহারের জন্য শতভাগ প্রস্তুত। এরমধ্যেই আমরা ফিল্ড টেস্ট করেছি। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ের ইমার্জেন্সি মুডে ট্রায়াল করব।

তবে দুই প্রান্তের থানার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এখন আমাদের প্রকল্পে নতুন করে ডিপিপি রিভাইজড হয়েছে। রিভাইজড ডিপিপি অনুযায়ী এখন টানেলের দুই প্রান্তে পুলিশ ক্যাম্প, ফায়ার স্টেশন তৈরি হচ্ছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এগুলোর কাজ শেষ হবে।

ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাসে টানেলে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, দুটো ফ্লাডগেট আছে, গত সাইক্লোনে ট্রায়াল করে দেখা হয়েছে। পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে জলোচ্ছ্বাসে কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া টানেলটি নদীর পৃষ্ট থেকে ১৮ হতে ৩১ মিটার গভীরে স্থাপন করা। এখানে ভূমিকম্পের প্রভাব পড়বে না। ভূমিকম্পে টানেল নিরাপদ থাকবে।

জানা যায়, টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকার ‘জিটুজি’ অর্থায়নে টানেলটি নির্মাণ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্বপ্নের টানেল নির্মাণকাজের যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনা রাষ্ট্রপতি শিং জিনপিং। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এর আগে তিনি দুপুরে মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর পরিদর্শন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিউজিল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে সিরিজ শুরু আজ
পরবর্তী নিবন্ধকয়লা নিয়ে ডুবল আরেকটি লাইটারেজ জাহাজ