আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদে বড় সাফল্যের একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন ২৮ অক্টোবর। টানেলের উদ্বোধনের পর আনোয়ারা প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে তাই নির্বাচনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসাবে দেখছে আওয়ামী লীগ। ভোটের তফসিলের আগ মুহূর্তে এই জনসভায় সরকারের সাফল্যের চিত্র সারাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরে ওয়ার্মআপ সেরে নিতে চায় ক্ষমতাসীন দল। পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে রওনা হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে শহর প্রান্তে নামফলক উন্মোচন করবেন। নদীর তলদেশে টানেল হয়ে টোল প্রদানের পর কাফকো কলোনি সংলগ্ন মাঠে জনসভায় যোগ দিবেন। এই সমাবেশে অন্তত ১০ লাখ লোকের সমাবেশের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। তবে আনোয়ারা প্রান্তে জনসভা হওয়ায় আনোয়ারা–কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যস্ততাই বেশি। সমাবেশের রূপরেখা ও প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে আগামী শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাতে ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের চট্টগ্রাম নগরীর সার্সন রোডের বাসায় আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে এর মধ্যে সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকায় মাঠ প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুতে দীর্ঘদিন পর পড়ছে রঙের প্রলেপ। টানেল সংযোগ সড়কে রোড মার্কিং, ডিভাইডারে রং, চাতরী চৌমুহনী বাজার ফকিন্নির হাটসহ বিভিন্ন স্থানে ইউটার্নে কাজ শুরু করা হয়েছে। টানেল সড়ক পর্যন্ত চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চাতরি চৌমুহনী বাজার থেকে সিইউএফএল পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি মেরামত কাজের আওতায় (বিটুমিনাস ওভার লেকার) বাস্তবায়ন কাজ চলছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, জনসভায় সরকারের বড় বড় সাফল্যগুলো তুলে ধরার উপরই বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, কর্ণফুলীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল, চট্টগ্রামে বিমানবন্দর পর্যন্ত এঙপ্রেসওয়ে নির্মাণ, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরাসরি জনগণের উপকারভোগী বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, স্মার্ট বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা ইত্যাদি তথ্যচিত্র জনসভায় তুলে ধরা হবে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান জানান, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই জনসভা হবে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এই সমাবেশ হওয়ায় তা হবে নির্বাচনী টার্নিং পয়েন্ট। টানেল সারাদেশের জন্য বিস্ময়, আর চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিশাল উপহার। এই সাফল্য সেলিব্রেশনে ১০ লাখ লোক সমাগমের টার্গেট রয়েছে। এর মধ্যে গত ৫ অক্টোবর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ একবার বর্ধিত সভা করেছে। আগামী ১৯ অক্টোবর কাজির দেউড়ি সংলগ্ন
ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে আরো একবার বর্ধিত সভা হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। প্রধান বক্তা থাকবেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ স্বপন।
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী বলেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির দিকনির্দেশনায় আনোয়ারায় বৃহত্তম এই জনসভার সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। আগামী ১৪ অক্টোবর রাতে ভূমিমন্ত্রীর বাসভবনে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সভায় ভূমিমন্ত্রী দিক নির্দেশনা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. ইসতিয়াক ইমন জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাফকো সেন্টারের কেইপিজেড মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক উন্নয়ন, যানজট নিরসন, আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ছয় লেন টানেল সংযোগ সড়কের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ জানান, চাতরি চৌমুহনী বাজার থেকে সিইউএফএল পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি মেরামত করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে। এছাড়া ছয় লেন টানেল সংযোগ সড়কের কালাবিবি দীঘির মোড় হতে শিকলবাহা ওয়াই জংশন পর্যন্ত ৪ লেনের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের আগেই সড়কটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে।