বঙ্গবন্ধু : আত্মপ্রত্যয়ী ব্যক্তিত্ব

রাশেদ রউফ | বুধবার , ২ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের ইতিহাসে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে অনেক। আগামীতেও হয়তো ঘটতে পারে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মতো এতোটা নৃশংস ঘটনা কোথাও ঘটেনি। তাঁকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মেহনতি এবং শোষিত মানুষের কণ্ঠকে বিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল প্রতিবাদী মানুষের বজ্রকণ্ঠস্বরকে। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্বের নিপীড়িত এবং নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতীক। আর তাঁকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাংলার জমিনে। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ তাঁর এক লেখায় বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে বিশাল ও ভারী যে লাশটি বাংলাদেশ নিজের বুকের কবরে বয়ে চলেছে, সেটি মুজিবের লাশ’। এ পংক্তির মাধ্যমেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কী ভয়াবহ দুঃখজনক পরিণতি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী শক্তি ছিল অসাধারণ। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সর্বজনীন সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পরপরেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমেরিকার এক কূটনৈতিকের মূল্যায়ন ছিল অন্যরকম। আর্চার ব্লাড নামের এই কূটনৈতিক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথমত একজন জননেতা এবং আন্দোলনকারী মানুষ। আজীবন সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ এবং একজন সম্মোহনী বক্তা হিসাবে তিনি বৃষ্টিস্নাত শত সহস্র জনতাকে আগুনের উত্তাপে আলোড়িত করতে পারেন। বাঙালিদের মধ্যে তাঁর এমন প্রতিদ্বন্ধী কেউ নেই, এমন বৈশিষ্টমণ্ডিত কেউ নেই যিনি তাকে ছাড়িয়ে যাবেন। আমেরিকান সাংবাদিক লেখক বি জেড খসরু’র ইংরেজিতে লেখা ‘বাংলাদেশে মিলিটারি ক্যু সিআইএ লিঙ্ক’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে আর্চার ব্লাডএর এই মূল্যায়নের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সিরাজ উদ্দিন সাথী।

বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি লিখেছেন। তাঁকে চমৎকার, শান্ত এবং আত্মপ্রত্যয়ী এক ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করে আর্চার বলেন, ‘তিনি অনলবর্ষী বক্তা। দলনেতা হিসাবে তিনি কঠোর ও কর্তৃত্ববাদী, প্রায়শই বেপরোয়া। মুজিবের মধ্যে আছে মসীহর মতো জটিল দিক। জনতোষণ ও মনোরঞ্জনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচির অভিজ্ঞতায় তা ক্রমশ আরো জোরদার হয়েছে’।

বঙ্গবন্ধুর কথাবলার ধরণ নিয়েও আর্চার লিখেছেন তাঁর রচনায়। তিনি বলেন, শেখ মুজিব কথা বলেন,‘আমার লোক, আমার জমি, আমার বন, আমার নদী উচ্চারণে। এতে স্পষ্ট মনে হয় তিনি নিজকে পরিচয় দেন বাঙালির আশা ভরসার ব্যক্তি হিসাবে। মুজিব যখন বাঙালির দুঃখবেদনার কথা বলেন, তখন তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাকে নিয়মানুগ চিন্তাবিদ বলে মনে হয় না, বরং তাকে নিয়ম ভাঙার মেজাজের অধিকারী বলেই বেশি মনে হয়।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু কোনো ব্যক্তির নাম নয়, তিনি সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে হয়ে উঠেছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সুদীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা ‘স্বাধীনসার্বভৌম বাংলাদেশ’।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠানে যুবক ছুরিকাহত
পরবর্তী নিবন্ধফেরির প্রথম দিনই দুর্ভোগ